
মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র কমিটির গঠনে অর্থ বিনিময়ের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী আছিফুল হক মজনু।
সংবাদ সম্মেলনে আছিফুল হক মজনু অভিযোগ করে বলেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে সর্বমোট প্রায় ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন ফয়েজ মোহাম্মদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মেহেরপুর পৌর কলেজের প্রভাষক ও মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির বিতর্কিত সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ আমার সাথে সাত লক্ষ তিন হাজার টাকা খেয়ে খায়েশ না মিটলে ২৯/১১/২৫ ইং তারিখে রাত ১০.৩০ মিনিটে মনোহরপুর গ্রামের জাফর উল্লাহকে সভাপতি দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে অবৈধভাবে কমিটি ঘোষণা করেন। কুতুবপুর ইউনিয়নের ০৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা সুপার ফাইভ কাউকেই না ডেকে বিএনপির বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করেন। ২৯/১১/২৫ ইং তারিখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, সারা দেশের মানুষ যখন দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে ব্যস্ত তখন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ কমিটি ঘোষণা করেন। এটা আমাদের বিএনপির জন্য লজ্জাজনক। আর কত টাকা বেশি পেয়েছিলেন, তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানতে চাই।
আমি বারবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদকে বলেছিলাম যে ভোটের মাধ্যমে ইউনিয়ন সভাপতি নির্বাচিত করতে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত ০৯টি ওয়ার্ডের সুপার ফাইভ ও তৃণমূলের মতামত নিয়ে ভোটের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ফয়েজ মোহাম্মদ বিষয়টি আমলে না নিয়ে অবৈধভাবে কমিটি ঘোষণা করেছেন।
টাকার বিনিময়ে দেওয়া এই অযোগ্য কমিটি বাতিল করা এবং এই বিতর্কিত সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করে সদর উপজেলা বিএনপি কমিটিকে বাঁচানোর জন্য জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি জানান, এক দিনেই পদ দেওয়ার নাম করে ৩ লাখ টাকা নেয়। পরে আপেল নামের একজনের উপস্থিতিতে ফয়েজ মোহাম্মদের ঘরে ৫০ হাজার টাকা দিই, যার সাক্ষীও রয়েছে। এরপর সভাপতি হওয়ার পর আমাকে সভাপতি করবেন বলে আরও ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন।
তিনি দাবি করেন, বারবার অর্থ নেওয়ার পরও ২৯ নভেম্বর রাতে মনোহরপুর গ্রামের জাফর উল্লাহকে সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করেন ফয়েজ মোহাম্মদ। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা থাকলেও কোনও তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে পরামর্শ না করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করা হয়।
আছিফুল হক মজনু অভিযোগ বলেন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু বিনিময়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি অনতিবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বাতিল ও ফয়েজ মোহাম্মদের সভাপতির পদ প্রত্যাহারসহ তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহম্মদ বলেন, টাকা-পয়সা লেনদেন করে কমিটি গঠনের সঙ্গে আমার ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। যদি এটাকে প্রমাণ করতে পারে, আমি রাজনীতি থেকে ইস্তফা দেব। সে ওয়ার্ড সভাপতি প্রার্থী ছিল এরকম আরও তিনজন প্রার্থী ছিল। আওয়ামী লীগের যে এমপি ছিলেন, কামারুল, তার জামাই হিসেবে তার সঙ্গে ছবিও আছে। সে ওই পরিচয়ে এর আগে মানুষের জমি দখল করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল, এমনকি নারী কেলেঙ্কারিতেও জড়িত ছিল বলে জানতে পারি। কমিটি দেওয়ার সময় ওয়ার্ড সভাপতিসহ বিভিন্নজনের মতামত নিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ তাকে সমর্থন করেনি। সে কারণেই তাকে সভাপতি করা সম্ভব হয়নি।
ফয়েজ আরও বলেন, সব ইউনিয়নেই কমিটি হয়ে গেছে, কুতুবপুর ইউনিয়নের হয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না, এজন্যই মোটামুটি ওয়ার্ড সভাপতিদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষেরই একই কথা ছিল যারা ১৭ বছর রাজপথে ছিল, তাদের কমিটিতে রাখা। সেজন্য তাকে সভাপতি করেছি সে ১৭ বছর রাজপথে ছিল, যুবদলের নেতা ছিল।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান বলেন, এই ঘটনাটা আমার মনে হয় না সত্য। কারণ এটা যদি হতো, তাহলে আগেই জানতে পারতাম। কমিটি হয়তো অন্য জায়গায় গেছে, সে কারণে হয়তো এমন অপপ্রচার করছে। আমি তাদের বলেছিলাম মিল্টন ভাই এসেছেন, তোমরা অভিযোগ দিছো, আমি আছি, মিল্টন ভাই আছেন, নেতারা সবাই আছেন, তোমরা আসো। কিন্তু ওরা কেউ আসেনি। অভিযোগ দিছে, আমি ডাকলাম তাহলে আসবে না কেন? অভিযোগ আমাদের কাছে আগে দেবে, সাংবাদিকদের কাছে দেবে কেন? জেলা বিএনপি কারোর কাছ থেকে এক কাপ চা খেয়ে কমিটি দিয়েছে এমন কোনো নিদর্শন নেই। এক কাপ চা খেয়ে কমিটি দেওয়া হয়নি, ৭ লাখ ৮ লাখ তো দূরের কথা। পুরো বিষয়টাই বানোয়াট।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের জের ধরে গতকাল সন্ধ্যায় অভিযোগকারীর বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।