টুটুলের চোখের পানিতে ভিজল আইয়ুব বাচ্চুর কবরের মাটি

গত বছর ১৮ অক্টোবর  পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি ও এলআরবির প্রধান আইয়ুব বাচ্চু।

গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শহরের চৈতন্যগলি কবরস্থানে আইয়ুব বাচ্চুর কবর জিয়ারত করতে যান আরেক সংগীত তারকা এসআই টুটুল। এ সময় তার চোখ ছিল ভেজা।

এসআই টুটুল বলেন, কবর জিয়ারত করেছি। কিছু সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকেছি। বসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আপনারা এসআই টুটুল হিসেবে যাকে দেখছেন, তা আমার এই বসের অবদান। বস ছাড়া আমি শূন্য।

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে এসআই টুটুলের যোগাযোগ সেই ১৯৮৭ সাল থেকে। তার আজকের ব্যান্ড সংগীতের এই সফল পথচলা তারই সহযোগিতায়।

চট্টগ্রামে নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘লাভেলো-কি আনন্দ উৎসব’। এসআই টুটুল জানান, অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইবেন। নতুন প্রজন্মের কাছে সামনে আইয়ুব বাচ্চুকে তুলে ধরবেন। তার গান শোনাবেন। তার কথা তুলে ধরবেন।

এ ছাড়া সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জামালখানে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এসআই টুটুল ছিলেন এলআরবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি এলআরবিতেই ছিলেন।

আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

বাচ্চুর সংগীতজগতে যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। তার কণ্ঠের প্রথম গান- ‘হারানো বিকেলের গল্প’। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তার জীবনে সফলতা বয়ে না আনলেও ১৯৮৮ সালে তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ তার জীবনে সফলতার দ্বার উন্মোচন করে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ড গঠনের পর প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়।

১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে।

একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়।

‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ তার বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।

২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম বলিনি কখনও প্রকাশিত। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ।

ছয় বছর পর ২০১৫ সালে তার পরবর্তী একক অ্যালবাম জীবনের গল্প বাজারে আসে।

গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স ও জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। ঢাকার মগবাজারে ‘এবি কিচেন’ নামে তার নিজস্ব একটি মিউজিক স্টুডিও রয়েছে।

আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গান ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতে যে কয়েকটি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার মধ্যে এই গানটি অন্যতম। লিখেছেন জনপ্রিয় গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী।

এ ছাড়া ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’ ‘সেই তুমি’, ‘সে তারা ভরা রাতে’, ‘সুখের পৃথিবী’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘আমি বারো মাস তোমার আশাই আছি’, ‘মেয়ে’, ‘আম্মাজান’।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে যান।.

সূত্রঃ  যুগান্তর