মেহেরপুর শহরের এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মিন্টুর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। শফিকুল ইসলাম মিন্টু বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মেহেরপুর সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি এবং প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম মিন্টু নিয়মিত স্কুল না উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে বেশি সময় কাটান এবং বিভিন্ন বিষয়ে দালালি করেন। তিনি একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, যা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী। বেলতলা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন নিয়ে জোর করে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও সরকারি বিধি অনুযায়ী ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার বিধান নেই। কিন্তু তিনি শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সুপারিশ নিয়ে ডেপুটেশন নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব না পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একজন নারী হয়েও তাঁকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন যা চাকরিবিধি ও শিষ্টাচারবহির্ভুত। এবং তিনি সরাসরি একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারি বলে নিজেকে বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ ধরণের একজন শিক্ষকের কাছে থেকে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা গ্রহণ করবেন সে নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে এবং শিক্ষক সমাজকে অন্যভাবে দেখানোর চেষ্টা করাচ্ছেন ওই শিক্ষক।
বেলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সাবরিনা জেসমিন বলেন, আমি এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষকদের মধ্যে সিনিয়র। সে হিসেবে আমাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোন ডেপুটেশন শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেতে পারেন না। কিন্তু এস এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মিন্টু রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে ডেপুটেশন নিয়ে এখানে এসে প্রধান শিক্ষককের নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা না থাকায় আমি তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিইনি। কিন্তু তারপরও তিনি নিজে নিজে প্রধান শিক্ষককের চেয়ারে বসেছেন এবং হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষককের কলামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শফিকুল ইসলাম মিন্টু এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি শিক্ষকদের গ্রুপে আমাকে নিয়ে অনেক বাজে বাজে মন্তব্য করেছেন। যে কারণে আমি মারাত্মত অপমানিত বোধ করছি। তাঁর বিরুদ্ধে যদি আমাদের বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে আমি আইনের শরণাপন্ন হবো।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়গুলো দেখে ও শুনে আমার ভিষণ খারাপ লেগেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারী শিক্ষককে নিযে যে থরাণের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা যা গর্হিত অপরাধ। এ বিষয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যারকে জানিয়েছি। তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক উদ্দিন বলেন, “ সহকারী শিক্ষক শফিকুল লিখিতভাবে ডেপুটেশনের আবেদন করলে আমি তাকে ৬ মাসের জন্য ডেপুটেশন দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো পাওয়া গেছে সে বিষয়ে মতামত পেতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্যারকে চিঠি দিয়েছি। স্যারের মতামতের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যদি বিচার দাবী করেন, তাহলে আমি তার পক্ষে সাক্ষী দেব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষককে কোনভাবেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মিন্টুর বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। আমি যে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সরকারি চাকুরি করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল ইসলাম মিন্টু মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্যার বললেন মাসিক মিটিংয়ে আসতে পারেন না, সে কারণে বেলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে যান এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন তাহলে মিটিংয়ে আসতে পারবেন। যে কারণেই আমি ডেপুটেশনি গেছি। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি আংশিক স্বীকার করে বলেন, “১০ জনের একটি গ্রুপে কিছু লেখালেখি হয়েছে, তবে ইচ্ছাকৃত কিছু নয়।”