তিন চাকার অত্যাচারে শহরে যানযট

অবৈধ অটোর ছন্নছাড়া বিচরণে বন্দি হয়ে পড়েছে মেহেরপুর শহর। শহরের যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে এই তিন চাকার গাড়ি গুলোকে।

পকেট রাস্তা থেকে শুরু করে শহরের প্রধান সড়কও তাদের দখলে। ৬.৮০ বর্গমাইলের এই ছোট্ট শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি অটো বা ইজিবাইক। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ব্যাটারী চালিত রিক্সা-ভ্যান। মেহেরপুর পৌরসভা ৮৬৯ টি অটো শহরে চলার অনুমতি দিলেও বাকি গুলো চলছে নিজ ক্ষমতার বলে।

কোন রকম নিয়ম নীতির বলয় না থাকায় ইচ্ছামত বিচরণ করছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা, সেই সাথে শান্ত শহরে যানজট লেগেই থাকে। দুর্ভোগ আর পরিবেশ দূষণের মত ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে শহরে।

মেহেরপুর শহরের কাশারী বাজার পাড়ার শেখ মোমিন বলেন, ইজিবাইক ও রিক্সা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েক বছর পর শহরে চলাচল করার উপায় থাকবে না। শহরের যানজটের প্রধান কারন এই অটো রিক্সা গুলো।

মেহেরপুর বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপু বলেন, অটো-ইজিবাইক এ গুলো মানুষের চলাচলের উপকারের জন্যই। কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে গেলে, সেটা বিপদজনক।
কোর্ট মোড়ের রিপন বলেন, বছর খানে আগে কোর্ট মোড় থেকে বড় বাজার যেতে সময় লাগতো ৫-৭ মিনিট। কিন্তু এখন অটো আর রিক্সার ঠেলায় ২০ মিনিট লাগে।

অটো চালক হেলাল, শামীম, সেন্টু বলে, আমরা গরীব মানুষ অটো চালিয়ে জীবিকা চালায়। যেখানে যাত্রী পাই দুইটা পয়সার জন্য সেখানেই ছুটে যায়। পৌরসভার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বছর লাইসেন্স দেওয়া হয়ে গেছে। আগামী তে আবার সুযোগ দিলে অনুমতি বা লাইসেন্স করে নেবো।

অটো ইজিবাইক মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, মেহেরপুর জেলাতে প্রায় ৭ হাজার অটো চলে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মতো সমিতির আওতাভুক্ত। এসব অটো গুলো মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন রাস্তায় চলাচল করে। তবে কোন এলাকার জন্য নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই।

অটো ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি আনারুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুর শহরে প্রায় দেড় হাজার অটো চলে। এর মধ্যে ৬৮৭ টি পৌরসভার লাইসেন্স ভুক্ত। বাকি গুলো নিজের খেয়াল খুশিমত চলে। শহরে চলাচলের কোন নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোন নিয়ম নেই। তবে পুলিশ সুপার আমাদের নিয়ে মিটিং করেছে। সেই সাথে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। পরবতির্তে আরও নির্দেশনা আসতে পারে।

মেহেরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহীনুর রহমান রিটন বলেন, মেহেরপুর শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে অচিরেই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পৌর কতৃপক্ষ। অটো-ইজিবাইক, রিক্সা-ভ্যান সব ধরনের যানবাহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা জারি করা হবে।

মেহেরপুর জেলা ট্রাফিক বিভাগের টি আই মুজতবা বলেন, যারা অটো-রিক্সা চালায় তারা সবাই গরীব পরিবারের। এদের বিরুদ্ধে আমরা চাইলেও কঠর হতে পারিনা। তবে শহরের যানজট নিরসনের জন্য মেহেরপুর পৌরসভা উদ্যোগ নিতে পারে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পৌর কতৃক জনবল দেওয়া থাকবে যারা অটো চলাচলের নিয়ম শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবে। মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহায়তা নিতে পারে পৌর কতৃপক্ষ।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ বলেন, রাস্তার শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অটো চালকদের একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়ে ছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা মত তারা চলতে পারে না। তবে সড়ক গুলো চলাচলের জন্য স্বাভাবিক রাখতে অটো চালকদের একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকা উচিৎ।

-মর্তুজা ফারুক রুপক