দর্শনা বন্দরে ১১ দিনে ১১ করোনা পজেটিভ :মিলতে পারে ভারতীয় ভেরীয়েন্ট

আহসান হাবীব মামুন/ ফরহাদ হোসেন, দর্শনা

দর্শনা বন্দর দিয়ে গত আট দিনে ভারত থেকে ফিরলেন ৬৯৩ জন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রী। যারা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন ১২ জন। এর মধ্যে একজন নারীসহ করোনা পজিটিভ ১১ জন। করোনা সনাক্ত হওয়ায় তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বাকীদের ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।

বন্দরে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও তাদের পিসিআর এর জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর জন্য বন্দরে ছয় সদস্যের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

এদিকে ৯ জন পজিটিভ রোগীর নমুনা আইইডিসিআর এ পাঠানো হয়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য । এদের মধ্যে ৩ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্স করার জন্য আইইডিসিআর পরীক্ষাগারে রেখেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। এই ৩ জনের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট থাকতে পরে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডাঃ এসএসএম মারুফ হাসান জানান, চুড়ান্ত ফলাফল আসলেই জানা যাবে তাদের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আছে কিনা?

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে গত ১৭ এপ্রিল থেকে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রী আসতে শুরু করে। এসব যাত্রীদের জন্য প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ইমিগ্রেশনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে দুদেশেই।

এ ছাড়াও যারা গুরুত্বর রোগী যেমন ক্যান্সার, হার্ট এবং অন্যান্য অপারেশন করতে ভারতে গিয়েছিলেন তাদের হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। সেখানে তারা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

বাংলাদেশের কলকাতা দূতাবাস থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট যাদেরকে দেয়া হয়েছে তারা যেকোন দিন দর্শনা বন্দর চেকপোস্ট দিয়ে ফিরতে পারবেন। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ৭৯৯ জনের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট এসেছে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের হাতে।

এসব বাংলাদেশীদের ফিরে আসতে দর্শনা বন্দর দিয়ে ফিরে আসতে জেলা প্রশাসন থেকে সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। বন্দরে চারজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক বন্দরে কাজ করছেন। এ ছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকতারাও কাজ করছেন। ভারত ফেরত যাত্রীদের জেলা প্রশাসনে ব্যবস্থাপনায় বাস, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্সে করে পুলিশ প্রহরায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নেয়া হচ্ছে।

বন্দরে যাত্রীরা পৌছুঁলে প্রত্যককে পানির বোতল, কেক বিস্কুট নাস্তা দেয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকারের নির্দেশে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন যাত্রীদের জন্য এ নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে জেলা প্রশাসন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। জেলা শহরের মান সম্পন্ন হোটেল থেকে এসব খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

এদিকে কোয়ারেন্টাইনে সেন্টারে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা শহরের হোটেল মেহমান সিলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ভারত থেকে যারা ফিরছেন তারা এদেশের নাগরিক। এ জেলার মেহমান। তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা-খাওয়ার সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার সম্মান জড়িয়ে আছে। সুতারাং কোন প্রকার ক্রুটি হলে বরদাশত করা হবে না।

চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইন্সিটিটিউট, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষন কেন্দ্র, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এবং পিটিআই সরকারিভাবে কোয়ান্টোইন সেন্টার করা হয়েছে। এগুলোতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় এখন পাশর্^বর্তী জেলা মেহেরপুর , কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়াও এইসব জেলা শহরগুলোর মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেলসমূহ কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে রাখা হয়েছে। যেখানে যাত্রীরা নিজ খরচে থাকতে পারবেন।