দলিল প্রতি ঘুষ নেন কমপক্ষে ৩৫০টাকা, কখনও তারও বেশি!

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিমাসে এই কার্যালয় থেকে কমপক্ষে ৩০০ দলির সম্পন্ন হয়। প্রতি দলিল থেকে কমপক্ষে সাড়ে তিনশ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোন কোন দলিলে আরো বেশি নেওয়া হয়।

জেলা রেজিস্টারে অডিট ব্যয়, নজরানা সহ এই নানাবিধ কারন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

গাংনীর বর্তমান সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে মাহফুজ রানা সাব-রেজিস্টার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই বেড়েছে দুর্নীতি। নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ঘোরে তার দুর্নীতির চাকা।

জানা গেছে, গাংনী সাব-রেজিস্টার অফিসে সরকারী নিয়মানুযায়ী ইউনিয়নের কৃষি জমি মূল্যেও ৭ শতাংশ, অকৃষি জমি ৮ শতাংশ, পৌর সভার মধ্যে ২ শতাংশ, প্রিন্টসহ হলফনামা বাবদ ৩০০ টাকা, ই-এ-এন বাবদ ২২৫ টাকা, পে- অর্ডার , নোটিশ বোর্ড ফিস বাবদ ২০০ টাকা ও দলিল লেখকদের লেখা খরচ বাবদ ৮২৫ টাকা উল্লেখ রয়েছে।

অসাধু দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারীরা বিভিন্ন কারন দেখিয়ে দলিল প্রতি ৩’শ টাকা থেকে ৮’শ টাকা ও নকল সরবরাহের জন্য ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫’শ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অফিস সহকারী হাঁসনা হেনা বকুল সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে এই টাকা গুলো আদায় করে। পরে সাব-রেজিস্টার সহ সকল কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে পকেটস্ত করেন।

এছাড়ও সময়মত অফিসেও আসেননা বলে জানা যায় সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা।

১নং দলিল লেখক সমিতির মহুরীদের চাপ দিয়ে জিপি দলিলে সরকারি ফিস ৬’শ টাকা। সেখানে ১ হাজার ৭’শ টাকা আদায় করছেন। ২নং কবলা দলিলে সরকারি ফিস মাত্র ৩’শ টাকা। দলিল ফাইলিংয়ের নামে সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৮’শ টাকা, ৩নং নকল সরবরাহের জন্য সরকারি ফিস ৪’শ ৫০ টাকা। সেখানে আদায় করা হয় ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা। ৪নং নামবারিং দলিলে ২ হাজার টাকা আদায় করছেন। ৫নং মসজিদ উন্নয়নের জন্য দলিল প্রতি ২০ টাকা উত্তোলন করা হলেও সেই টাকারও ভাগ নেয় মাহফুজ রানা। এছাড়াও স্ট্যাম্প কম্পিউটার কম্পোজ না করে রেজিস্ট্রি কাজ সম্পাদন করছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক জানান, দলিল প্রতি অতিরিক্ত ৩৫০ টাকা দেওয়া লাগে। এর মধ্যে জেলা রেজিস্টার বাবদ ২০০ টাকা, সাব-রেজিস্টার বাবদ ১০০ টাকা এবং অফিস বাবদ ৫০ টাকা উল্লেখ করা হয়।

অন্য এক দলিল লেখক জানান, কমপক্ষে ৫০০ টাকা না দিলে কোন জমি রেজিস্ট্রি করেন না সাব-রেজিস্টার। অফিস সহকারি হাসনা হেনা বকুলের মাধ্যমে সাব-রেজিস্টার এই অর্থ গ্রহণ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩০০ দলির সম্পন্ন হয় গাংনী সাব-রেজিস্টার কার্যালয় থেকে। দলিল প্রতি কমপক্ষে ৩৫০টাকা নিলেও অতিরিক্ষ লক্ষাধিক অতিরিক্ত অর্থ তারা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী গাংনী শহরের হাসপাতাল বাজারের হায়দার আলী জানান,গাংনী সাব-রেজিস্টার অফিসে কোন নিয়ম নেই । অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোন কাজতো হয়ই না কেউই কথাও শোনেন না।

বানিয়াপুকুর গ্রামের মুসফিক জানান, সরকারী নিয়মের বালাই নেই লাগাম হীন ভাবে টাকা নেই হয় আমরা সাধারন মানুষ কার কাছে যাবো সবাই সাব-রেজি: অফিসের তিনজনের কাছে জিস্মি।

গাংনী উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের আবুসামা জানান, আমি জমি ক্রয় করে রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা চাওয়ায় বিপাকে পড়েছি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা জানান, গাংনী সাব-রেজিস্টার অফিসকে একটি মডেল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু একটি মহল আমাকে বাধা গ্রস্থ করছে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।