
দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে টিসিবির পণ্য বিতরণকে ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম অরাজকতা। সীমিত বরাদ্দে শত শত কার্ডধারী খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। গতকাল বুধবার ভোর থেকেই কার্ডধারীরা এসে জড়ো হতে থাকে হাউলী ইউনিয়ন পরিষদে।
জানা গেছে, হাউলী ইউনিয়নে মোট কার্ডধারীর সংখ্যা ২২০৬ জন। এর মধ্যে ডিজিটাল এক্টিভেট কার্ড রয়েছে ১৪৮৯টি। অথচ সর্বশেষ চালানে এসেছে মাত্র ১১০৬ কার্ডের বিপরীতে পণ্য। ফলে কয়েকশ’ কার্ডধারী কোনো বরাদ্দই পাননি।
পূর্বে নিয়মিতভাবে সব কার্ডের বিপরীতে পণ্য আসলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঘাটতি সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল আগে আসলে আগে পাওয়া যাবে। এ ঘোষণার পর ভোর থেকেই পরিষদ প্রাঙ্গণে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, আগে ডিলাররা পণ্য প্যাকেট করে নিয়ে এসে বিতরণ করতেন, তখন ভোগান্তি কম হতো। কিন্তু বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদে এসে প্যাকেট তৈরি করায় ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে অপেক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অভিযোগ, গরিব মানুষের কষ্ট দেখার কেউ নেই। মুখেই সবাই বলে অথচ কার্ড থাকতেও পণ্য পাচ্ছিনা।
ক্ষুব্ধ কার্ডধারী রমেলা খাতুন বলেন, আমার বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো পণ্য পাইনি। শুধু আমি নই, আরও অনেকে খালি হাতে ফিরেছেন।
স্থানীয়দের প্রশ্ন সরকারি পণ্য যখন সীমিত আসে, তখন কেন সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয় না? তাদের দাবি, ন্যায্য বণ্টন ব্যবস্থা না চালু করলে এ ধরনের অনিয়ম-অবিচার চলতেই থাকবে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সীমিত বরাদ্দের কারণে তারা চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, সরকারের পাঠানো বরাদ্দ অনুযায়ীই বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রশাসন শুধু দায় এড়াচ্ছে, সমস্যার সমাধান করছে না।
এলাকার সচেতন মহল সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় মারামারি থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। সরকারি পণ্য বণ্টনে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত না হলে গ্রামীণ জনজীবন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এবিষয়ে ইউনিয়নবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এবিষয়ে টিসিবির পণ্য বিতরণ ট্যাগ অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, সরকারিভাবেই বরাদ্দ কম আসছে, যার ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না। যারা আগে আসছে তারা পাচ্ছে, কারণ কার্ডের সংখ্যা বেশি বরাদ্দ সংখ্যা কম।