
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর পণ্য বিতরণকে কেন্দ্র করে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। ডিলারের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গতকাল বুধবার বেলা ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টিসিবির ডিলার দর্শনা পুরাতন বাজারের কামাল উদ্দিন মার্কেটের এবি ট্রেডার্স, যার স্বত্বাধিকারী আল আমিন। গতকাল সকালে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে হাউলী ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণ শুরু করা হয়। পণ্য বিতরণ বিষয়ে ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসারকেও আগে থেকে জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিন হাউলী ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ১১২টি টিসিবির পণ্য সরবরাহ করা হয়। অথচ ইউনিয়নে টিসিবির অ্যাক্টিভ কার্ড রয়েছে ১ হাজার ৪৫১টি। ফলে শুরু থেকেই পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এর ওপর পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় অত্যান্ত বিশৃঙ্খলা ও মাত্র একটি অ্যাপের মাধ্যমে, যার ফলে বিতরণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলতে থাকে। পণ্য নিতে আসা উপকারভোগীদের জন্য কোনো লাইনের ব্যবস্থা ছিল না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনেক মানুষ পণ্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন। দীর্ঘ অপেক্ষা, বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে কয়েক দফা বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে এবং পন্য বিতরণ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সংবাদ পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং নিয়ন্ত্রণে আনে।
টিসিবির পন্য নিতে আসা বৃদ্ধ সায়েফ আলী বলেন, এত ভোগান্তি কোনদিন হয়নি। এ যেনো মগের মুল্লুক। পরিকল্পিত ভাবে সরকারের মহতি উদ্যোগকে নস্যাৎ করার পায়তারা। বিশৃঙ্খলা হলে মানুষ থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে এরা।
পরবর্তীতে ট্যাগ অফিসার আতিকুর রহমান এবং হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সরাসরি ঘটনাস্থলে হস্তক্ষেপ করেন। তাদের তত্ত্বাবধানে এবং হাউলী ইউনিয়ন যুবদল ও ছাত্রদল কর্মীদের সহায়তায় পুনরায় সুশৃঙ্খলভাবে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বিশেষ করে ট্যাগ অফিসার ও ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তার আহ্বানে হাউলী ইউনিয়ন যুবদলের অন্যতম নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফের তত্ত্বাবধানে লাইনের ব্যবস্থা, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং পণ্য বিতরণ কার্যক্রম অল্প সময়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে সম্পন্ন করা হয়। এতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা উপকারভোগীরা শান্তভাবে পণ্য গ্রহণ করতে সক্ষম হন।
উপকারভোগীরা জানান, শুরুতে চরম ভোগান্তির শিকার হলেও শেষ পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং যুবদল ও ছাত্রদল কর্মীদের সহযোগিতায় সুশৃঙ্খলভাবে পণ্য বিতরণ সম্পন্ন হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, পর্যাপ্ত অ্যাপ ব্যবহারের ব্যবস্থা না থাকা, আগাম ঘোষণার ঘাটতি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণেই পুলিশ আসতে বাধ্য হয়েছে। এত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে যে রাগে ক্ষোভে ও অভিমানে অনেক মানুষ চলে গেছে। যেখানে পন্যের ঘাটতি, সেখানে সব পণ্য বিতরণ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক গুলো পন্য অবশিষ্ট ছিলো।
তারা দ্রুত ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছভাবে টিসিবির পণ্য বিতরণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এবিষয়ে টিসিবির পণ্য বিতরণের ট্যাগ অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, টিসিবির পণ্য বিতরণের বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি, পন্য বিতরণ হবে এ বিষয়ে আমি জানতাম না। অবশিষ্ট যে পন্যগুলো রয়েছে সেগুলো আগামী রবিবার বিতরণ করা হবে।