দামুড়হুদাতে মোবাইল আসক্ত সন্তান, দিশেহারা অভিভাবকরা

করোনা মহামারির কারণে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে চলছে অনলাইনে লেখাপড়া। ওই সুযোগে অভিভাবকের উদাসীনতায় অনলাইনের অবাধ ব্যবহারে উঠতি বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফ্রি ফায়ার বা পাবজি নামক গেম আসক্তিতে।

এসব গেম যুব সমাজের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ধীরে ধীরে তাদের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যয়বহুল এই গেমস হয়ে উঠেছে বই বিমুখ ছাত্রদের অবসর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু।

এখন অভিভাবকদের অভিযোগ, মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের গেমে আসক্তদের খাওয়া-ঘুম তো নেই-ই বরং তাদের সময় নেই কারোর সঙ্গে গল্প বা কথা বলার। এভাবে দিন দিন বর্তমান যুব সমাজের তরুণ তরণীরা প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে শারীরিক ও মানসিকভাবে।

এসব খেলার এক একটা চরিত্র কিনতে অনেক টাকা খরচ করতে হয় তাদের। এই অর্থ তারা কোথা থেকে সংগ্রহ করে তা নিয়েও আতঙ্কিত অনেক অভিভাবক।

ছোট বাচ্চারা বাবা-মার কাছে জেদ ধরে টাকা আদায় করে। না দিলে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটাচ্ছে হরহামেশাই। মায়ের সঙ্গে অনেকের বাগবিতন্ডার জেরে মারামারি বা অন্য ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়েরা অনলাইন ক্লাসের নাম করে নতুন মোবাইল কিনেছে। কিন্তু ক্লাসে তাদের বিন্দুমাত্র মনোযোগ নেই। ’

একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, এভাবে চলতে দেওয়াটা ভালো ফল বয়ে আনবে না। দেশ, সমাজ, জাতি অতিদ্রত ধ্বংসের কবলে পড়তে যাচ্ছে। ব্লু-হোয়েলের মতো ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়ার আগেই এই খেলা বন্ধ করা দরকার। সরকারের উচিত এই ব্যাপারেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।

আরিফুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, অনেক সময় পিতামাতা বা অভিভাবকদের উদাসীনতায় এব তাদের প্রতি খেয়াল না রাখায় সন্তানেরা ঝরে পড়ছে।

তিনি বলেন, দামুড়হুদায় ইদানীং নিজেরা একটু ফ্রি থাকার জন্য, সন্তানদের শাষণ-বারণ ভুলে গিয়ে পিতামাতা তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্মার্ট ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি।

রাসেল আহম্মেদ নামের এক শিক্ষক বলেন, বাচ্চারা এখন ফ্রি-ফায়ার, পাবজি’র মত গেইম খেলে। অনেক বাবা-মা তার সন্তানকে নিয়ে সাফাই গেয়ে বলেন, ছেলেটা মোবাইল হাতে না দিলে কিছুই খায়না। তাই বাচ্চারা এখন স্মার্ট ফোনে ফ্রি-ফায়ার অথবা মোটু-পাতলু,কার্টুন নিয়ে ব্যাস্ত। ভার্চুয়াল জগৎ অপ্রাপ্তবয়সের একটা শ্রেণীকে একেবারেই গ্রাস করে ফেলেছে।

ক্রিকেট ফুটবল খেলার মাঠগুলো এখন খা খা করছে। কোন খেলোয়াড় নেই। খেলার মাঠগুলো’র চাইতে বাঁশবাগান, কলাবাগান আর ঝোপঝাড়ের মধ্যো শিশু-কিশোরদের ভিড় বেশি লক্ষ করা যায়। সব মিলিয়ে এ যেন মূল্যবোধ এর চরম অবক্ষয় পরিশেষে পিতামাতা,পরিবার,সরকার এবং প্রশাসন এর উচিত এই অবক্ষয়ের দিকে জোর নজরদারী করা এবং সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এই বিষয়ে জয়রামপুর গ্রামের আজাদ আলী বলেন, আমার ছেলে রাত দিন ২৪ ঘন্টা মোবাইল গেমস নিয়ে পড়ে থাকে। এজন্য তাকে অনেক মারধর করেছি। তাতে কোনো লাভ হয়নি। কিছু বলতে গেলে বাড়ি থেকে চলে যায়। তিনি আরো বলেন আপনারা সাংবাদিক প্রশাসনের বলে একটু ভয়ভীতি দেখিয়ে ভালো করার ব্যবস্থা করেন।

জয়রামপুর কাঁঠাল তলার অভিভাবক আব্দুল সামাদ বলেন, আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। বর্তমানে সে আর স্কুলে যায় না। সব সময় মোবাইলে গেমস খেলা নিয়ে পড়ে থাকে। কিছু বললে সে এখন আত্মহত্যার হুমকি দেই। এখন এই ভয়ে আর কিছু বলতে পারিনা।

এই বিষয়ে ডুগডুগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক আকবর আলি বলেন, আমার কাছে অনেক জন ফ্রি ফায়ার পাবজি গেমস খেলার বিষয়ে বলেছে। আমি স্কুলে যাওয়ার পথেও আমার স্কুলের ছেলেরা রাস্তার ধারে বসে খেলা করতে দেখেছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী আইন শৃঙ্খলা মিটিং এ এই বিষয়ে উপস্থাপনা করবো। এছাড়া আমার বিদ্যালয়ের মা সমাবেশ অনুষ্ঠানেও সকল অভিভাবকদের এই বিষয়ে আলোচনা করবো।