দুটি ভিন্ন গ্রামে একই নামে দুটি বিদ্যালয়

দুটি ভিন্ন গ্রামে একই নামে দুটি বিদ্যালয়

গাংনীতে একই নামে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিদ্যালয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়। এমপিও ভূক্তির কারনে এখন দু গ্রামের মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে শক্তির লড়াই।

তবে, মামলার কারনে এখন আটকে গেছে বিদ্যালয় দুটির সকল উন্নয়ন কার্যক্রম। বিদ্যালয় দুটি উপজেলার মোমিনপুর ও গোয়ালগ্রামে অবস্থিত।

একই নামে চরগোয়ালগ্রামে আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মোমিনপুর গ্রামের সচেতন মানুষজন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি পত্র দিয়েছে। এমজিজিএম বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হলেও আটকে গেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমপিওভূক্তকরণ।

সূত্র মতে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে গাংনী উপজেলার মোমিনপুরে স্থাপিত হয় ‘এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়।’ পাশাপাশি চারটি গ্রামের নামের প্রথম অক্ষর (মোমিনপুর, গোয়ালগ্রাম (পাড়) গোয়ালগ্রাম (চর), মোহাম্মদপুর) দিয়ে শুরু হয় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

অবশেষে ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা ও কয়েকজন শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়ের আইডি কোর্ড নং ব্যবহার করে মোমিনপুরের পরিবর্তে নিজ গ্রাম চরগোয়ালগ্রামে এসে একই নামে এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন ২০১৯ সালে।

২০২২ সালে এমপিওভূক্ত হওয়ায় ১৯৯৯ সালের প্রথম স্কুল মোমিনপুরের পরিবর্তে ঠিকানা পরিবর্তন করে চরগোয়ালগ্রামে স্থাপিত ২০১৯ সালের স্কুলটিকে এমপিওভূক্তর ঠিকানায় ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে।

এ নিয়ে মোমিনপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করেছেন। তাদের দাবী প্রথম স্কুলটি ১৯৯৯ সালে মোমিনপুরে স্থাপিত হয়। অনেক কষ্ট করে স্কুলটিকে এ পর্যন্ত আমরা চালিয়ে আসছি। অথচ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা নিয়ম বহির্ভূতভাবে মোমিনপুরের স্কুলটি উদ্যেশ্যে প্রনোদিতভাবে নিজ গ্রাম চরগোয়ালগ্রামে ২০১৯ সালে একই নামে স্থাপন করেন। ২২ সালে মোমিনপুর এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হলে প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা চরগোয়ালগ্রামে স্কুলটিকে এমপিওভূক্ত দেখানোর চেষ্টা করছেন।

স্বারক নং উমাশিঅ/গাংনী/মেহের/২০১৯/৫১৬ তারিখ, ০৭/০২/২০১৯ গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর ও ভূঁয়া কমিটি গঠণ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গাংনী উপজেলাস্থ এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থানান্তর ও ভূঁয়া কমিটি গঠণ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের জন্য ০১/০১/২০১৯ খ্রীষ্টাব্দ তারিখে কথিত স্থানান্তরিত বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে যায়। বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায় একটি নির্মীয়মান টিন শেড ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে কিছু শিক্ষার্থী বেঞ্চে উপবিষ্ট। এমজিজিএম বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে সেখানে দেখতে পাওয়া যায়। এবং সেখানে গ্রামের অনেক অভিভাবক, গণ্যমান্য মুরব্বি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান শিক্ষকের নিকট বিদ্যালয়ের স্থানান্তরের বিষয় জানতে চাইলে তিনিসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ জানান, মুল বিদ্যালয়টি মোমিনপুর গ্রামে ভৌগলীক অবস্থার কারনে শিক্ষার্থী সংকট হয় ফলে শিক্ষার্থীর অভাবে বিদ্যালয়টি ধ্বংসের মুখে। অন্যদিকে স্থানান্তরিত বিদ্যালয়টি জনবহল এলাকায় হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংকট নেই। অতপর স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তির বক্তব্য শুনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে অদুরে অবস্থিত মুল এমজিজিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়। সেখানে ছাত্র ছাত্রীসহ স্থানীয় অনেক অভিভাবক ও মুরব্বীগণ উপস্থিত ছিলেন। এলাকাবাসি এবং শিক্ষার্থীদের একটাই দাবী কোনো কিছুর বিনিময়ে তারা বিদ্যালয় স্থানান্তরের পক্ষে নয়। প্রয়োজনে তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী।

গোয়ালগ্রামে স্থানান্তরিত প্রধান শিক্ষকের কাছে ভূঁয়া ম্যানেজিং কমিটি গঠণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, ম্যানেজিং কমিটির কোনো সদস্যের কোনো সন্তান বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেনা। ম্যানেজিং কমিটির বিপরীতে প্রদর্শিত শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ ভূঁয়া। এ সংক্রান্ত লিখিত প্রত্যায়পত্র ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়েছেন। তার স্বীকারোক্তির সাথে প্রত্যয়নপত্রের বর্ণনার হুবুহু মিল রয়েছে। যেহেতু অনুমোদিত কমিটির সকল সদস্যই ভূঁয়া। সেহেতু এই জাতীয় কমিটি গঠণ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি সংক্রান্ত বিধিমালা ২০০৯ এর প্রবিধান-২ এর দফা (ক) এর উপদফা (খ) এর পরিপন্থী।

এই অবস্থায় মোমিনপুরে অবস্থিত প্রথম এমজিজিএম বিদ্যালয়টি এমপিওভূক্ত হিসেবে আইনগত সকল বিধি বিধান অনুযায়ী হওয়ার কথা থাকলেও নিজ গ্রামে স্থান পরিবর্তন করে প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল হুদা অবৈধ চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ জানান, দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের ফলে একই নামে পৃথক দুটি বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তিনি চেষ্টা করেও দুই প্রতিষ্ঠান এক করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

মেহেরপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্বাছ উদ্দীন বলেন, আমি নতুন এসেছি। এখনও পুরো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। তবে, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক এমপিও’র বেতন ভাতা দেওয়া হবেনা।