
ভুয়া সনদে নিয়োগ নেওয়ায় দুদকের মামলায় মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান আখিতারার জেল হাজতে সময় কাটালেও তাকে এখনো সাময়িক বরখাস্ত করেনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। এনিয়ে ম্যানেজিং কমিটির ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
গত ১০ জুলাই মেহেরপুরের স্পেশাল ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক এস এম নাসিম রেজা আখিতারাকে জেল হাজতে পাঠান। অথচ প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও বিধি লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সহকারী লাইব্রেরিয়ান আখিতারাকে এখনো সাময়িক বরখাস্ত না করে নিশ্চুপ রয়েছেন।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা সমন্বিত কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ০৩/২০২৪, তারিখ ০৫ নভেম্বর ২০২৪।
বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী লাইব্রেরিয়ান আখিতারা খাতুন ভুয়া সার্টিফিকেট খাঁটি হিসেবে উপস্থাপন করে চাকুরি গ্রহণপূর্বক সরকারি ৮ লাখ ৮২ হাজার ১২৭ টাকা আত্মসাতের অপরাধ করেছেন।
এই মামলায় আরও তিনজন আসামি যুক্ত আছেন। তারা হলেন, বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিনয় কুমার চাকি এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি। উক্ত আসামি তিনজন আখিতারা খাতুনের সাথে পারস্পরিক যোগসাজশে ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করেন।
গত ২৫ মে মেহেরপুর জেলা জজ আদালত চারজন আসামির বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তিনজন আসামি ইতোমধ্যেই জামিন পেলেও আখিতারাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফারুল ইসলাম ডাবলুকে জিজ্ঞেস করা হয় আখিতারা খাতুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কি না। তিনি উত্তরে বলেন, আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অর্ডার দিয়ে দিয়েছি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এখনো করেছেন কি না বলতে পারছি না।
মেহেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি এখনো অবগত নই। খোঁজ নেব এবং এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেব।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হজরত আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চাকরির বিধি অনুযায়ী বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান আছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নানাধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের নামে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বহু নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। মেহেরপুর প্রতিদিনে সিরিজ নিউজ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও চলমান। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি এবং আরও তিনটি মামলা চার্জশিটের অপেক্ষায়।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের এই মাত্রার স্খলন থাকলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন কতটা নিরাপদ সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এলাকার সাধারণ মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাদের দাবি, অতিসত্বর প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রশ্নে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।