দৌলতপুরে হুমকির মুখে নদী রক্ষা বাঁধসহ কয়েক হাজার পরিবার

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের মহা উৎসব চলছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল প্রতিদিন অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে এই বালি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ফিলিপনগর নদী রক্ষা ব্লক এবং বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাজার হাজার মানুষের বসত বাড়ি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বালি উত্তোলন বন্ধে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হলেও বালি উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বালি ব্যবসায়ীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ এ বালি উত্তোলন ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বালি উত্তোলন বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ফিলিপনগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্বেলন করে দৌলতপুরের ইউএনও শারমিন আক্তারের অপসারন ও অবিলম্বে বালি উত্তোলন বন্ধের দাবী করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ফিলিপনগর এলাকার মামুন, রাজিব, নজু, বাদশাসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন ফিলিপনগর নদী রক্ষা বাঁধের নিচে পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন ট্রলি ট্রলি বালি অবৈধভাবে উত্তোলন করে চলেছে। এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। ফলে ওই প্রভাবশালী মহল পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কাজ অব্যাহত রেখেছে।

অবিলম্বে এই ধরনের অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ না হলে মহিষকুন্ডি-রায়টা নদী রক্ষা বাধসহ ফিলিপনগর নদী রক্ষা ব্লক, ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফিলিপনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিএসএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সসহ কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এলাকাবাসীর বিরোধীতা সত্তেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাব খাটিয়ে বালি ব্যবসায়ীরা কিভাবে এই বালি ব্যবসা করে আসছেন তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দিকে অভিযোগ ছুড়ে দেন তারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন কমিশন নেয়ার কারণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। সরেজমিন নদী ঘুরে বালি উত্তোলনের সত্যতাও পাওয়া গেছে। পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন নির্বিগ্নে বালি উত্তোলন করার ঘটনা দেখা গেছে। নদী থেকে বালি উত্তোলন করে নদীর পাড়ের স্তুপ করে রাখার চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যাক্তি দীর্ঘ দিন ধরে এই বালি উত্তোলনের কারবার চালিয়ে আসছেন। বারবার প্রশাসনকে অনুরোধ করা হলেও অদৃশ্য কারণে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে বালি ব্যবসায়ী মামুন বলেন, রাজিব, নজু, বাদশা মিলে একসাথে বালির ব্যবসা করছেন। তারা বৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করছেন। রাজশাহী-কুষ্টিয়ার মাঝ দিয়ে যে পদ্মা প্রবাহিত সেখানে বালি উত্তোলন করার জন্য সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া হয়েছে। সে মোতবেক তারা পদ্মার রাজশাহী অংশের ভিতর থেকে বালি উত্তোলন করছেন।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় প্রায় এক মাসের অধিক সময় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত ছিলাম। এ সময় দায়িত্ব পালন করেছেন এসিল্যান্ড।

বালি উত্তোলনের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি দুইবার এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে নদীতে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয়েছে। স্থানীয়দের অসহযোগিতার কারণে অভিযানের খবর পেয়ে বালি উত্তোলনকারীরা নদী থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।