পটল চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে মিরপুরের কৃষকরা

পটল চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন।

কয়েক বছর আগেও কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। তবুও তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো।

উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পটল চাষ বিষয়ক পরামর্শ এবং পটল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজের এক বিঘা জমিতে পটল চাষ করে দরিদ্র সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন তাঁর ভাতিজা তিতুমীর ও রাজিবুলকে সহযোগী হিসেবে সবসময়ই তার পাশে রাখেন।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন দুইজনকে সাথে নিয়ে পটল তোলায় ব্যস্ত। আরও একজন শ্রমিক পটল ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। পটল চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তার এক বিঘা জমিতে পটল চাষে শ্রেণী ভেদে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদিত পটল বিক্রি করে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা হয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন প্রায় ৪ মন পটল তোলা হয় ক্ষেত থেকে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই পটল নিয়ে যায়।

তবে ধান চাষে তেমন লাভ না হওয়ায় কৃষি অফিসারের পরামর্শে প্রথম বারের মতো পটল চাষ করেছি। এতে ভালো লাভ হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে পটলের আবাদ করবো।
জাহাঙ্গীর হোসেনের মতো পৌরসভা ব্লকের যুগিপোল গ্রামের আরেক পটল চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, এক সময় তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো।

কিন্তু বর্তমানে পটল চাষ করে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাদের ৩৩ শতক জমিতে পটল চাষ করে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ৬০ হাজার টাকার বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে পটল চাষীদের অভিযোগ সুষ্ঠু বাজারজাত ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি থাকতে হয় অনেক সময়।

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার বিশ্বনাথ পাল বলেন, পটলের জমিতে সাধারণত: হেলেঞ্চা, দূর্বা, দণ্ডকলস এ সব আগাছার উপদ্রব দেখা যায়। এসব আগাছা জমি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে পটল গাছকে দুর্বল করে দেয়, ফলে পটলের ফলন কমে যায়। তাই পটলের জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখা উচিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ সাবিহা সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে মিরপুর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে পটলের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। আমরা কৃষককদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে এবং নানান পরামর্শ প্রদান করে থাকি।

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার ফরহাদ শরীফ বলেন, সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ২৩৫ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে উৎপাদিত সবজির মাথাপিছু দৈনিক গড় প্রাপ্যতা ৮২ গ্রাম। চাহিদার তুলনায় প্রাপ্যতার এই বিশাল ঘাটতি পূরণের জন্য দেশের সবজি উৎপাদন অবশ্যই বাড়ানো প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, পটল একটি জনপ্রিয় উচ্চ মূল্য সবজি। তবে সারা বছর ধরেই কম-বেশি পাওয়া যায়। অন্যান্য সবজির তুলনায় এর বাজার মূল্য তুলনা মূলক ভাবে বেশি থাকে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাজারে যখন সবজির ঘাটতি দেখা দেয় তখন পটল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের মোট সবজি চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পটল পূরণ করে থাকে বলেও জানান তিনি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে উত্তম কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করে কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বারি পটল -১ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।