
মেহেরপুরের গাংনীতে সরকারি খাল অবৈধভাবে দখল করে পুকুর খনন ও ভরাট করার খেসারত দিচ্ছেন এলাকার কয়েক হাজার কৃষক।সামান্য বৃষ্টি বা প্লাবনেই তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বিস্তির্ণ মাঠে মাসের পর মাস জলাবদ্ধতার কারণে ৩ থেকে ৪ হাজার বিঘা জমি এখন অনাবাদি হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছেন কয়েক শত কৃষক। তবুও মিলছেনা সুরাহা। দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন না হলে, উঠতি ফসলও ঘরে তুলতে পারবেন না চাষিরা। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
স্থানীয়রা জানান, তৎকালিন সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমান তেরাইল ও ষোলটাকা মৌজার মধ্যদিয়ে ভেদড়ী খাল খনন করেছিলেন। যে খাল দিয়ে গাংনী উপজেলার তেরাইল, মহব্বতপুর, বাদিয়াপাড়া, কামারখালি, ষোলটাকা ও সহড়াবাড়িয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হয়ে একটি খালে প্রবাহিত হতো। বিগত ১০/১৫ বছর যাবৎ এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল সেই খালটি অবৈধ দখল করে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করেছে। ফলে ওই মাঠের কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তির্ণ ওই মাঠটিতে জমে আছে কোথাও হাটু আবার কোথাও গলা পানি। দিনের পর দিন জমে থাকা পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ৬/৭ গ্রামের ওই মাঠের ধান, পাট, শাকসবজি থেকে শুরু করে নানা ফসল নষ্ট হচ্ছে বারবার। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার শত শত কৃষক। কৃষকরা বলছেন, লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে ঋণের ফাঁদে পড়ছেন তারা। “সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। “এ সমস্যা সমাধানে গত রবিবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন কৃষকরা। তারা দ্রুত মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, খালটি দখলমুক্ত করে খনন এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়েছি। ৩ বিঘা লাগানোর পর সেটা ডুবে গেছে, বাকী দুই বিঘা আর লাগাইনি। কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, পানিতে সব ফসল ডুবে গেছে। এখন অনুপায় হয়ে ভাবছি এখন পরিবারের লোকজন কি খাবে ?”
এলাকাবাসি জানান, “১০/১৫ বছর আগে এ্খানে খাল ছিল, সেই খাল দিয়ে পানি বের হতো। প্রভাবশালীরা দখল করে পুকুর কাটায় কৃষকদের জন্য এটি ক্ষতির কারণ হয়েছে।” খয়বার আলী বলেন, “ঋণ করে বর্গা চাষ করি, সেই ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। ১০ বছর কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। বৃষ্টি হলেই জমি ডুবে যায়।“
স্থানীয়রা বলেন, ভেদড়ীর বিলের মুখটা মেরে দেওয়ায় পানির গতিপথ বন্ধ হয়ে এই মাঠ জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। এখনই যদি খাল খনন আর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা হয়, তবে আগামী মৌসুমে কৃষকেরা ভয়াবহ সংকটে পড়বেন।”
গাংনী উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ওই মাঠে গিয়ে কৃষকদের সমস্যার কথা শুনেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।