পেঁয়াজ সমাচার এবং আমাদের চরিত্র

সম্প্রতি একরকম হঠাৎ করেই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানী বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। অবশ্য কিছুদিন আগেও একবার এরকম করেছিলো তারা। এর ফলে তখনও যে ঘটনা ঘটেছিলো এখনও ঠিক সেই ঘটনাই ঘটলো। রফতানী বন্ধ ঘোষনা দেবার পরদিনই বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুনেরও বেশি হয়ে গেলো। অথচ সরকার বারবার বলছে তাদেরকাছে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে তাতে অন্তত ৩ মাস চলা যাবে। তাহলে পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেন?

সরকারের কথা যদি ঠিক হয় তাহলে তো অন্তত ২ মাস বা তার বেশি সময়ের আগে বাংলাদেশে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হবার কথা না। তাহলে দাম বাড়লো কেন? কারা বাড়ালো এবং কেন বাড়ালো? আমরা হরহামেশাই ভারতকে গালমন্দ করি যে তাদেরকে বাংলাদেশের বন্ধু বলা হলেও তারা আসলে আমাদের শত্রু। তারা সব সময় আমাদের বিপদে ফেলে। ভারত আমাদের বন্ধু না শত্রু সে তর্কে আজকে না যেয়ে বরং তর্কের খাতিরে ধরে নিলামতারা আমাদের শত্রু সে কারনে তারা হঠাৎ করে পেঁয়াজের রফতানী বন্ধ করে দিয়ে আমাদের বিপদে ফেলতে চেয়েছে বা বিপদে ফেলে দিয়েছে।

কিন্তু ৩ মাসের মজুত থাকার পরও হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দিয়ে আমরা কি করলাম? আমরা তো আমাদের শত্রু না তাহলে কেন করলাম এই কাজ? কেন এই বিপদের সময় দেশের সাধারণ মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজের লোভ মেটাতে তৎপর হলাম। এর উত্তর কে দেবে? অথচ আমাদের কি করা উচিত ছিলো ভারত যেহেতু আমাদের বিপদে ফেলতে চেয়েছে তাই যাতে আমরা সে বিপদে না পড়ি তার জন্য বাজার স্থিতিশীল রেখে অন্য কোন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানীর সর্বাত্বক চেষ্টা করা। এবং এই সময়কালে দেশের মানুষের যেন কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা যাতে দাম যথেষ্ঠ পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এছাড়া ভারত যেহেতু বারবার রফতানী বন্ধ করে দিচ্ছে সেটা যে কারনেই করুক না কেন এবং তাতে আমাদের যেহেতু বিপদ হচ্ছে সেহেতু পেঁয়াজ আমদানীর ক্ষেত্রে ভারতের প্রতি অতি নির্ভরতা বন্ধ করে অন্যান্য বাজারের দিকে নজর দেয়া।সেটাই তো সত্যিকারের নাগরিক এবং দেশপ্রেমের কাজ। কিন্তু সেটা কি আমরা করলাম? না করলাম না। তার বদলে কিছু মানুষ নিজের অধিক মুনাফা করার লোভে দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে সিন্ডিকেট বানিয়ে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।এই যদি হয় আমাদের দেশপ্রেমের নমুনা তাহলে ভারতকে লাগবে না আমাদের দেশের বারোটা বাজানোর জন্য আমরা নিজেরাই যথেষ্ঠ।আমার তো মনে হয় এ সমস্ত মানুষ এরকম সুযোগের অপেক্ষাতেই থাকে কখন দেশের এরকম সংকটকাল আসবে আর তারা সেই অবস্থাকে জিম্মি করে টাকার পাহাড় গড়বে।আমরা সব সময় অন্যের ছিদ্রান্বেশনকরে বেড়াই অথচ নিজেদের দোষ কখনই আমাদের চোখে পড়ে না।

আমার তো মনে হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা যা করেছিলো এখন আমাদের দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরাও তাই করলো । রাজাকাররা নিজেদের দেশের মানুষের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্থানের পক্ষে কাজ করেছিলো এখনও এ দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা নিজেদের দেশের মানুষের বিপক্ষে গিয়ে নিজেদের পেট ভরালো। দুইটাই তো নিজের দেশের বিরুদ্ধে বেঈমানী করা।অবশ্য এই ধরনের কাজ এটাই প্রথম নয়।

যখনই কোন সংকট আসে সব সময়ই কিছু মানুষ সেই সংকটময় মুহুর্তকে তাদের নিজের মুনাফা করার সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করে।এটাই এই দেশের কিছু মানুষের চরিত্র! পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে যখন কোন উৎসব হয় তখন সেই দেশে বিভিন্ন রকম পণ্যে বিভিন্ন রকম ছাড় এবং মূল্য কম করা হয় অথচ আমাদের দেশে যখন কোন উৎসব আসে তখন সেটা যেন মানুষের গলাকাটার উৎসবে পরিণত হয়। এমনকি পবিত্র রমজান মাসে যখন সবচেয়ে সংযম প্রদর্শন করা উচিত কিন্তু রমজান মাসটাই যেন আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের সারা বছরের মধ্যে সবচেয়ে মুনাফা করার মাস হিসাবে বিবেচিত হয়।

আসলে আমাদের নিজেদেরক্ষতি করার জন্য কোন ভারত কিংবা অন্য কোন শক্তির প্রয়োজন হয় না আমরা নিজেরাই যথেষ্ঠ নিজেদের ক্ষতি করার জন্য। যতদিন আমাদের এই চরিত্র না বদলাবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের কোন উন্নতি সম্ভব নয়।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী