প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আর চান না আ.লীগ নেতারা

মেহেরপুরের মুজিবনগরে বাগোয়ান ইউনিয়ন যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছেগতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ মোড়ে। জেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ত্রী-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু নেতা কর্মী জামাত-শিবিরের চেয়েও ভয়ংকর বলে সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বক্তারা বলেন, প্রতিমন্ত্রীর আশেপাশে অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাটদের দেখা যায়। মেহেরপুরের ক্যাসিনো সম্রাটদের সন্তানদেরকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অংগ সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে এসেছেন। ফরহাদ হোসেন দলের গঠনতন্ত্র না মেনে সিনিয়র নেতাদের কোন রকম মূল্যায়ন না করে নিজের খেয়ালখুশি মতো সকল কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করেন। মেহেরপুর জেলার আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কান্ডারীদের তিনি দল থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। সম্মেলনে বক্তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘মেহেরপুরে নৌকার মাঝি পরিবর্তন করুন না হলে নৌকাডুবি হবে। এই মঞ্চ এই যারা উপস্থিত আছেন তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে আমরা সম্মিলিতভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করব।
মুজিবনগর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান চাঁদুর সভাপতিত্ব সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস এবং প্রধান বক্তা ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পেরেশান। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন।

সম্মেলনে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমার সময় আমি এই অঞ্চলের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করেছিলা, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের পিছনে জমি অধিগ্রহণ করেছিলাম যেখানে আজ নার্সিং ইনস্টিটিউট তৈরি হচ্ছে। সে জায়গায় আজ হাসপাতালে নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। আমার সময়ই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ সয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পরিণত হয। মুজিবনগর ডিগ্রী কলেজ আমার সময়েই কারীকরণ করা হয়। ভৈরব খনন প্রকল্পের উদ্যোগ আমার সময়েই নেওয়া। তাহলে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মেহেরপুরের জন্য করেছেন কি?

জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল বলেন, ফরহাদ হোসেনের আমলে উন্নয়ন হয়েছে কার, উন্নয়ন হয়েছে তার পরিবারের লোকজনের। তার ভাই কাজ না করে সরকারি প্রকল্পের ঠিকাদারের টাকা উঠিয়ে ফেলে, সংখ্যালঘু পরিবারের টাকা মেরে দেয়। আর ফরহাদ হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর না রেখে ঈদের সময় বিএনপি সভাপতি মাসুদ অরুণ কে পায়জামা-পাঞ্জাবি উপহার দেয়। মেহেরপুরের মুজিবনগরে উন্নতি হয়েছে সেটা শুধু শেখ হাসিনারই অবদান।’

মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ ফরহাদ হোসেন আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগের মতো চলতে দেন না। যিনি জবাবদিহিতা রাজনীতি করেন না তার বিরুদ্ধে আজ মেহেরপুরের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ এ কথা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক যখন দলের কেন্দ্রীয় সভায় কথা বলতে গেছেন তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের তাকে ধমক দিয়ে বলেন আপনি বসেন, আপনি কিসের সেক্রেটারি, আপনি তো ফরহাদ হোসেনের পিএ। সে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সেক্রেটারি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজন আলী বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নৌকার বিপক্ষে কাজ করে। তার কারণেই মুজিবনগরে চারটি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী হেরেছে। আবার মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীকে হারাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন ফরাজ হোসেন। আমরা সকল নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মন্ত্রীর অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয় করেছিলাম। ‘

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই আপনি আমাদের অবস্থা দেখুন, আমাদের কথা বুঝুন, আমরা আজ কিভাবে অত্যাচারিত। যে নেতারা মেহেরপুর ও মুজিবনগর কে আগলে রেখেছিল সেই নেতারাই আজকে নৌকায় ভোট দেয়ার কারণে অত্যাচারিত। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই নৌকার মাঝি পরিবর্তন করুন যাকে নিয়ে আমরা এই মেহেরপুর ও মুজিবনগরে নৌকাকে জেতাতে পারবো।’

মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ. ম. হারুন বিন ইমতিয়াজ জুয়েল বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী মুজিবনগর এর চারটি ইউনিয়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দিয়ে চারজন প্রার্থীকে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন ২০২১ সালে নৌকার পক্ষে ভোট করেন নাই, ইউনিয়নবাসী সকলে এটা জানে। নৌকায় ভোট না করে উনিত নেত্রীকে মানলেন না। তাহলে উনি মুজিব আদর্শের লোক না। আমরা এখানে মুজিব সেনা দেখতে চাই। আমরা দেখেছি উনি ১১ই নভেম্বর মহাজনপুর ইউনিয়নে নৌকার বিপক্ষে ভোট করেছেন, বাগোয়ান ইউনিয়নে নৌকার বিপক্ষে ভোট করেছেন, আমদহ ইউনিয়নেও নৌকার মনোনীত প্রার্থীকে হারানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। উনি নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করেন নাই, পরাজিত করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। ‘

জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান বলেন, ‘আজকে যারা মঞ্চে বসে আছে তারাই আওয়ামী লীগের রাজপথের সৈনিক। আর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরাদ হোসেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতির মৃত্যুর দিনে জানা যায় না এসে পরিবারে কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলেন। আবার বি এম স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষকের জানা যায় না এসে তিনি মেহেরপুর শামসুদ্দোহা পার্কে কনসার্টের উদ্বোধন করেছিলেন। অনুরোধ করেও তাকে এরকম জঘন্য কাছ থেকে নিভৃত করা যায়নি। তিনি নাকি আবার শিক্ষক, তিনি কেমন শিক্ষক। ‘

সম্মেলনে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুর ১ সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল, মেহেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যানের অ্যাড ইয়ারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এম এ এস ইমন, মেহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খ ম ইমতিয়াজ বিন হারুন জুয়েল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জেমস স্বপন মল্লিক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তহমিনা খাতুন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাভলী ইয়াসমিন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি রেহেনা মান্নান ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা খাতুন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহাজনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহমান নান্নু, মোনাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাত আলী, দারিয়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, বাগোয়ান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন মল্লিক এবং মেহেরপুর জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু।

সম্মেলন শেষে সভাপতি পদে ৩ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন প্রার্থী হওয়ায় দুই দিন সময় নেওয়া হয়।