প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিঋণ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিঋণ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিঋণ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে বড় ঋণের পরিবর্তে ছোট ঋণ বিতরণে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। এমনকি কোটি টাকার ঋণের পরিবর্তে ১০ টাকার ক্ষুদ্র হিসাবধারী কৃষক, মত্স্যচাষি, খামারি এবং ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে যারা এখন পর্যন্ত কৃষি ও পল্লিঋণের সুবিধা পাননি, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দিতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশ দেয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের পরিচালক কানিজ ফাতিমা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, কিছু ব্যাংক ক্ষুদ্র কৃষক ও প্রান্তিক গ্রাহককে কৃষিঋণ দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। এতে কৃষি ও পল্লিঋণের লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি কৃষিঋণ বিভাগের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে উঠে এসেছে। এ অবস্থা থেকে বের হতে বৈঠক ডেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে ঋণ বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোকে বড় ঋণের বদলে ঋণের সীমা কমিয়ে ছোট ছোট ঋণ বিতরণে নির্দেশ দেওয়া হয় বৈঠকে। এরপরও যদি কোনো ব্যাংক নতুন করে বড় ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে, সেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণে অনেক ব্যাংকের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ) ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে। এতে সুদের হার ও চার্জ বেশি পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে কিছু ব্যাংক বড় ঋণ দিয়ে থাকে। এতে পরিচালন খরচ কমে আসে। তবে কৃষিঋণ বিতরণ যাদের জন্য করা, তারা যে বঞ্চিত হচ্ছেন সেটা আমরাও বুঝি।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তপশিলভুক্ত ব্যাংকগুলো এ ঋণ বিতরণ করবে। ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করবে। গত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য গত বছরের নভেম্বরে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের মেয়াদ প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এই তহবিলের ক্ষেত্রে কৃষিঋণ এবং তহবিলের ঋণ বিতরণে শর্ত প্রযোজ্য হবে।

উল্লেখ্য, নতুন কৃষি নীতিমালায় ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ করতে বলা হয়, যা আগে ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে নতুন করে কয়েকটি বিষয় যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে নতুন কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। বিশেষ করে পল্লি অঞ্চলে আয়-উত্সারী কর্মকাণ্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। ছাদকৃষিতে অর্থায়ন করতে পারবে ব্যাংক। অর্থাত্, বাড়ির ছাদে বাগান করতে ঋণ পাবেন গ্রাহক। এছাড়া চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুঁচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মত্স্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।