ফ্রি ফায়ার,পাবজিতে ধ্বংস হচ্ছে কিশোর-তরুণরা

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে ৭ কিঃ মিঃ দূরে খোকসা গ্রাম। এই গ্রামের কদমতলা পাড়ার ব্রীজে বিকেল ৫ টার পর শুরু হয় কিশোর দের জটলা। সবার হাতেই মোবাইল ফোন আর তাদের মুখে নতুন নতুন শব্দ। “ ডানে বামে মার মার গুলু ওয়াল, এনিমি,রিভাইব দে ভাই, “বিকেল বেলা যখন মাঠে খেলার কথা সেই মাঠে এখন মোবাইল হাতে তাদের দুই আঙ্গুল দিয়ে চলছে ঝড়ের গতি। গ্রামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বেল্টু জানায়, স্কুল খোলা না থাকায় বিকেলের অবসর সময়ে তারা খেলছে। তাদের সাথে কথা বলার সময় ভিড় জমালেন কিছু অভিভাবক তাদের মুখে অভিযোগের সুর লিটন নামের এক অভিভাবক জানান এই স্কুল বন্ধের পর থেকে তাদের গ্রামের ছেলেরা মোবাইলে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য বাড়িতে চাপ দিচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ঋণ এর কিস্তি তুলে ছেলেদের মোবাইল কিনে দিচ্ছেন। এখানেই শেষ না। মোবাইল কেনার পর শুরু হয় আসল সমস্যা প্রায় প্রতিদিন ই এমবি কেনার জন্য তারা বাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছে। তাছাড়া গেইম এর পোশাক, নতুন নতুন অস্ত্র কেনার জন্য বিকাশে টাকার জন্য তাদের নানা রকম বাইনা। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয় এর ছাত্র রাও এই তালিকায় আছে।

পাশের শেখপাড়া গ্রামের দশম শ্রেণীর ছাত্র সাইম জানায়, তারা গেইম খেলে সুধু টাকা ব্যয় নয় আয় ও করছে। পুরাতন আইডি বিক্রি করে আইডি ভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৬০ হাজার পর্যন্ত আয় করা যায়। অনেকে বিক্রি করছে। অষ্টম শ্রেণীর শিশির জানায়, ফেসবুক ও ইউটিউব এ গেইম লাইভ করা অনেকে তাদের পেশা হিসেবে নিয়েছে। তাই অবসরে গেইম খেলা খারাপ কিছু নয়।

গেইম বন্ধ হলে তাদের অর্জিত ডাইমন্ড সহ ডিজিটাল কালেকশন যেমন হারাবে তেমনি বন্ধ হবে আইডি কেনা বেচা। তবে অভিভাবকরা বলছেন এই সমস্থ গেইম বন্ধ হলে বাচ্চারা পড়ালেখায় যেমন ফিরবে তেমনি বাচবে তাদের অনেক টাকা।

খোকসা গ্রামের মত মেহেরপুরের সব গ্রাম মহল্লায় ফ্রি—ফায়ার, পাবজি নামের অনলাইন গেম কিশোর—তরুণদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গেইম এর ডিজিটাল কারেন্সি ডাইমন্ড কিনতে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিশোর দের বিপথে যাওয়া রুখতে হাইকোর্ট থেকে ফ্রি ফায়ার, পাবজি মোবাইল গেইম সহ টিকটক,লাইকি এর মত অ্যাপ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

এ আর বি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলগীর কবির বলেন, অনলাইন ক্লাসের জন্য মোবাইল ব্যবহার শুরু করার পর এখন ছাত্ররা মোবাইল গেইম এ আসক্ত হয়ে পড়েছে। গেমে আসক্ত হওয়ার ফলে লেখাপড়া মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। আদালত এর নির্দেশ থাকলেও এটা এখনো বন্ধ হয়নি। সরকারের উচিৎ এসকল গেম দ্রুত বন্ধ করা। মোবাইল না কিনে দেওয়ায় অনেক ছেলেরা বাবাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেছে বলে শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা এখনো আমাদের হাতে পৌছায়নি। নির্দেশ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।