বরাদ্দ ৫’শ হলেও খাবার মিলছে অর্ধেক!

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীকে সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ডাক্তারসহ সকলকে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবার।

জনপ্রতি ৫’শ টাকা শুধু খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তিন বেলার খাবারের যে মান তাতে ২৫০ টাকাও হবে না বলে অভিযোগ করেছেন সেবাদানে নিয়োজিত অনেকেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও তেমন একটা লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
গত ৩১ মে থেকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়। তারপর থেকে পর্যায়ক্রমে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সসহ ৯৩ জন এই আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে সেবা দেয়া হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ৩ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন আছে। তিন শিফটে ২জন করে মোট ৬জন একাটানা ৬দিন করে তাদের সেবা দেন। পরে তাদের চুক্তিবদ্ধ মেহেরপুরের ফিন টাওয়ার নামে একটি আবাসিক হোটেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। সরকারিভাবে তাদের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করা হয়। মেহেরপুর ফিন টাওয়ারের সাথে এ বিষয়ে একটি লিখিত চুক্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চলমান করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হোটেল ভাড়া বাবদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। কোয়ারেন্টিনে থাকা জনপ্রতি প্রতিদিন ৫’শ টাকা খাবারের জন্য বরাদ্দ। হোটেল থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ২ কিলোমিটার রাস্তায় পরিবহন ভাড়া মাসে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে ফিন টাওয়ার ১২জন নার্স কোয়ারেন্টিনে আছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্নমানের খাবার খেয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে তাদের। ইতিমধ্যে করোনা রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সুমাইয়া খাতুন নামের দুইজন চিকিৎসক ও কামরুন্নেছা নামের একজন সিনিয়র নার্সও আক্রন্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন সুস্থ হলেও ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টিনে থাকা কয়েকজন বলেন, সকালে পাতলা ৪টি রুটি ও দুইটি ডিম ভাজি করে তিনটি ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও দুপুরের খাবারে বেশ কয়েকদিন পরপর ছোট ছোট মাংস দিলেও বেশির সময় দেওয়া হচ্ছে খাবার অযোগ্য ছোট শিং মাছ। যা দিয়ে সম্পূর্ণ ভাত খেয়ে শেষ করা হয়র।ি রাতের বেলা একটি ডিম সাথে সামান্য ডাল ও সবজি। যে মানের সবজি ডাল দেওয়া সেটি নেহাতই পেটের দায়ে খেতে হয়।

নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের কথা ¯ী^কার করে ফিন টাওয়ারের বর্তমানে দায়িত্বে থাকা তপন রেজা বলেন, একটু আধটু ১৯/২০ তো হয়ই। এছাড়াও আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমরা চেষ্টা করছি সেইভাবে খাবার দেওয়ার। ভ্যাট কেটে আমাদের জনপ্রতি দেওয়া হয় ৪১৫ টাকা। এতে করে সব খরচ মিটিয়ে আমাদের কিছুই লাভ হয়না। মাস খানেক ধরে এমন হয়েছে। ভবিষ্যতে আর হবেনা। আমাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এরপর থেকে আমি ভালোমানের খাবার দেবো।
এ বিষয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছেও এমন অভিযোগ এসেছে। আমরা ফিন টাওয়ার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। এরপরও যদি খাবারের মান ভালো না হয় তবে আমরা খাবার অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করবো।

মেহেরপুর সিভিল সার্জন নাসির উদ্দিন জানান, এমন কোন অভিযোগ আমি পাইনি। যদি খাবারের মান নিম্ন হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।