বাঁধাকপির বিদেশযাত্রা

সবজি উৎপাদনের জেলা মেহেরপুরের বাঁধাকপি রপ্তানি হচ্ছে এশিয়ার মহাদেশের কয়েকটি দেশে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরো একটি নতুন দুয়ার তৈরি হয়েছে গেল দুবছর ধরে। ২০২০ সালে প্রথম মেহেরপুরের বাঁধাকপি মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়। এবছর মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাঁধাকপি রপ্তানি হচ্ছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ানসহ বেশ কয়েকটি দেশে। এছাড়াও মেহেরপুরে উৎপাদিত বাঁধাকপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও।

দেশে ও বিদেশে নিরাপদ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে মেহেরপুর। বাঁধাকপির চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের উৎপাদিত বাঁধাকপি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিশেষ ভূমিকা।

জানা গেছে, মেহেরপুরের সাহারবাটি, বন্দর, মোনাখালি, সোনাপুর, কাথুলিসহ গাংনীর বিভিন্ন গ্রামে এই কপির আবাদ হচ্ছে। আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতিদিন মেহেরপুর থেকে ৩০-৩৫টি গাড়ি লোড হচ্ছে চিটাগাংয়ের উদ্দেশ্যে। যা চিটাগাং থেকে সুমদ্র পথে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে। দেশের বাজারে এক ট্রাক বাঁধাকপিতে চাষী পেত ৪০-৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে দেশের বাইরে বিক্রি করে চাষী পাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।

বাঁধাকপি

বাঁধাকপি

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলাতে এক হাজার হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন কৃষকরা। সাধারণত শীতের মধ্যেই বাঁধাকপির চাষ ও হারভেস্টিং শেষ হয়ে যায়। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বাঁধাকপি শেষ হয়ে যায়। এ লক্ষে মেহেরপুরের চাষিরা জমিতে কীটনাশক সহনশীল ও নিরাপদ সবজি বাঁধাকপি চাষ করছেন। চলতি মৌসুমে চারটি দেশ ১৫০০ মেট্রিক টন বাঁধাকপির নেয়ার চাহিদা দিয়েছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। সে মোতাবেক সরবরাহ করা হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায়। কৃষকদের কাছ থেকে কপিগুলো সংগ্রহ করছেন রপ্তানীকারকরা। ক্ষেত থেকে সাদা কাগজে মুড়িয়ে বস্তা ভর্তি করে রপ্তানী উপযোগী করা হচ্ছে বাঁধাকপি। রপ্তানীকারকদের মাধ্যমে বাঁধাকপি বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। রপ্তানীকারকরা কৃষকের জমি থেকেই নিরাপদ বাঁধাকপি সংগ্রহ করেছেন।

রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল শাখা থেকে জানা গেছে, চারা রোপণের পর থেকে কপি সংগ্রহ করা পর্যন্ত নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে রফতানি উপযোগী করে তোলা হয়। এবারে রফতানিতে সফল হলে আগামী বছর আরও অনেক সবজি রফতানি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের চাষি বাবর আলী বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। জমি থেকেই এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। নেওয়ার পর তারা সাদা প্যাকেটে মুড়িয়ে বস্তাবন্দি করে ট্রাকে নিয়ে যান চট্রগ্রাম বন্দরে। আমি দেড় বিঘা জমির বাঁধাকপি বিক্রি দিয়েছি ৮০ হাজার টাকায়। আমার খরচ হয়েছিলো ৩০ হাজার টাকা।

মোনাখালী গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, আমার নিজের ট্রাক আছে। কৃষকের কাছে থেকে কিনে আমিন ট্রেডার্স নামের দিনাজপুরের একটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিই। আবার অনেক সময় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও এসে সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে কিনে ট্রাক লোড করে নিয়ে যায়। প্রতি গাড়ি ৭০-৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দেশের বাইরে এগুলো যাচ্ছে তাই চাষিরা এমন দাম পাচ্ছে। তা না হলে ৪০-৪৫ হাজার টাকা দাম হতো।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, আমাদের নিরাপদ সবজির বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। এবছর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে নিরাপদ সবজি হিসেবে বাঁধাকপি বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। অন্যান্য দেশেও বাড়ছে নিরাপদ এই সবজির চাহিদা। কোনভাবেই যেনো এ সুযোগ হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।