বাস্তবায়ন হয়নি মেহেরপুরের ‘সীমান্ত হাট’ কার্যক্রম

মেহেরপুর জেলার ভারতীয় সীমান্তে ৩টি ‘সীমান্ত হাট’ বসার কথা থাকলেও অধ্যবধি সে কর্মসূচী বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ বেড়েছে সীমান্তবাসির।

দু দেশের কৃষি ও খাদ্য পণ্যের বাণিজ্যিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সীমন্তের নোম্যান্সল্যান্ডের উপর সপ্তাহে দুই দিন হাট বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

এছাড়া কৃষি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি, দু দেশের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বাজার দর সম্পর্কে কৃষকদের সরাসরি জানানো, দু দেশের বিলুপ্তপ্রায় খাদ্যপণ্যগুলোরও পরিচিতি লাভ। কৃষি পণ্যের বাজারজাত বৃদ্ধির উদ্দ্যেশ্য ও লক্ষ ছিল এতে।

২০১৭ সালে এই জেলার সীমান্তে তিনটি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো উভয় দেশের সরকার। সেসময় সীমান্ত হাটের জন্য সাইট সিলেকশনও করা হয়েছিল। পরবর্তিতে সরকারী কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় হাটের কার্যক্রম ঝুলে যায়।

এ জন্য স্থান নির্ধারিত ছিল গাংনী উপজেলার কাজিপুর, সদর উপজেলার বুড়িপোতা ও মুজিবনগর উপজেলার মুজিবনগর।
গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ওমেদ আলী, স্থানীয় রাজনীতিবিদ আব্দুল আলিম ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, আমাদের এখানে একটি সীমান্ত হাট বসার জন্য দু দেশের বিজিবি ও বিএসএফ পর্যায়ে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিলো। সে মতে উভয় দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনেক দুর এগিয়েছিলেন। সীমান্ত হাটের জন্য স্থানও নির্ধারণ করেছিলেন উভয় দেশের পক্ষ থেকে। কিন্তু আজোও হাট বসানো হয়নি। হাট বসানো হলে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থার একটি আমুল পরিবর্তন হতো।

বুড়িপোতা গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ ও রওশন আলী বলেন, সীমান্তে হাট বসলে কৃষি পণ্য বিক্রি করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের বাজার পেতাম আমরা। এছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরী হতো। সীমান্তে উভয় দেশের মানুষের মাঝে যে উত্তেজনাটা থাকে সেটিও অনেকটাই দুর হতো। কিন্তু সেটি ঝুলে গেছে প্রশাসনিক জটিলতায়।

বিজিবির একটি সূত্র জানায়, বিজিবি এবং বিএসএফ নিয়মিত পতাকা বৈঠক, ফ্রেন্ডসিপ টূর্ণামেন্ট ও যৌথভাবে টহল দেওয়ায় সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফ’র মধ্যে সোহার্দ্য ও সম্প্রীতি বিরাজ করছে। সীমান্তে এখন অনেকটাই উত্তেজনা প্রশমন হয়েছে। আগে সীমান্তবাসি অনেকটাই অসচেতন ছিলেন। এছাড়া আমাদের দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য উঠান বৈঠক, মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের সাথে আলোচনা সভা ইত্যাদী করে থাকি। যে কারনে এদেশের মানুষরা আগের মত জীবনের ঝূঁকি নিয়ে সীমান্তে যায়না।

৪৭ বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কুষ্টিয়া সেক্টরের অধিনায়ক লেপ্টেনেন্ট কর্ণেল গোলাম মোর্শেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখন স্বনির্ভর একটি দেশ। সীমান্তে হাট বাজার বসালে দু দেশের মানুষের যাতায়াত বাড়বে। এর ফলে অনেক খারাপ মানুষ এপার ওপার হবে। আইনশৃংখলার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ভারত থেকে সাবান শ্যাম্পু বা অন্যান্য প্রসাধনি দ্রব্যাদি অবাধে আসার ফলে দেশীয় শিল্পকলকারখানায় উৎপাদিত প্রসাধনী মার খাবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো। আমরা এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি তাই আমরা চাচ্ছিনা ওভাবে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠুক।

সীমান্তে কাটাতারের বেড়া আর ভাগীরতি নদীই মেহেরপুর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলাকে বিভক্ত করেছে। অথছ, স্বাধীনতার পূর্বে দু-দেশের মানুষের মধ্যে ছিলো এক অন্যরকম সেতু বন্ধন। দু দেশের মানুষের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নদী পার হয়ে অবাধেই আসা যাওয়া চলতো।

জেলার গাংনী, মুজিবনগর ও সদর থানার বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত। জেলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত ২২ টি রুট রয়েছে।