মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের কার্যক্রম চলছে হযবরল অবস্থায়। গ্রাহকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। আন্দোলনের নামে লাইন টেকনিশিয়ানরা কর্মবিরতি পালন করছেন। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিলেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। গ্রাহকদের অভিযোগ গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার
(ডিজিএম) বিজয় চন্দ্র কুন্ডু যোগদান করার পর থেকে জোনাল অফিসে চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে আবাসিক বিদ্যুৎ বিল দ্বিগুণ প্রস্তুত করে, ১ মাসে গ্রাহকের কয়েক লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগে, গাংনীর হিজলবাড়িয়া গ্রামে ডিজিএম বিজয় চন্দ্র কুন্ডুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন সাহারবাটি ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আব্দুল খালেক। এসময় ডিজিএম ও মিটার রিডারদের অপসারণ দাবি করেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অনুকূলে বিভিন্ন শ্রেণীর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী (গ্রাহক) রয়েছেন ৫ লক্ষ ১২ হাজার।
এসকল গ্রাহকদের সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সকল সেবা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন ৬৪০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। তার মধ্যে রয়েছেন ১৭৪ জন লাইন টেকনিশিয়ান। যারা বৈদ্যুতিক ত্রুটি হলেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন।
গাংনী জোনাল অফিসের তথ্যে জানা গেছে, গাংনীতে মোট গ্রাহক রয়েছেন ৪১ হাজার ৬৮৪ জন। এদের মধ্যে আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন ৩৭ হাজার ৪৯ জন, বাণিজ্যিক ২ হাজার ৩৯৬ জন, শিল্প ৪৩২ জন, সেচ পাম্প ১ হাজার ১৭৪টি, মসজিদ ৪৯৭টি, এবং নির্মাণাধীন গ্রাহক ১৩১টি। বামন্দি এরিয়া অফিসের আওতায় ৪০ হাজার গ্রাহক। এসব গ্রাহকের নিকট থেকে ১ মাসে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হয়।
মিটার রিডার ও বিল প্রস্তুতকারী বিলিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের বিরুদ্ধে ভূতুড়ে বিল করার অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক। এতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ঝোড়পাড়া গ্রামের গ্রাহক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার মিটার নং ৮৫২৪৪, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার উপরে বিল আসেনি।
সেখানে জুলাই মাসের ৪০০ টাকার জায়গায় ৩৬০০ টাকা এসেছে। আমার মত এলাকার সকল মিটারের বিদ্যুৎ বিল ডাবল প্রস্তুত করে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎ সম্পর্কে অবগত না। অফিস থেকে যে বিল করে দেওয়া হয় সেটাই তারা পরিশোধ করে।
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল খালেক জানান, আমার গ্রামের প্রায় ১০০ জন গ্রাহক এসে অভিযোগ করেন গত জুলাই মাসের তুলনায়, আগস্ট মাসে দ্বিগুণ বিল প্রস্তুত করেছে।
১ হাজার টাকার জায়গায় ৭ হাজার টাকা, ৭০০ টাকার পরিবর্তে ১৬০০ টাকা এসেছে, এভাবে সকল গ্রাহকের একই অবস্থা।
আগস্ট মাসের বিল নেওয়া বন্ধ রেখে, ঘটনাটি তদন্তপূর্বক পরে বিল নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
আবাসিক এক মিটার ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জুন মাসের বিল ১ হাজার ৩৬ টাকা, জুলাই মাসের বিল ১ হাজার ২৭৬ টাকা হলেও বর্তমান আগস্ট মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল এসেছে ৩০ হাজার ৬৮৪ টাকা। প্রস্তুতকৃত বিলে চরম গরমিল বলে জানান গ্রাহকরা।
ভূতুড়ে বিলের এমন ঘটনাটি ঘটেছে, গাংনী উপজেলার রায়পুর ইউপির অন্তর্গত রায়পুর গ্রামেও। মিটার ব্যবহারকারীর নাম অর্থাৎ গ্রাহক রায়পুর গ্রামের শ্রী মদু দাসের ছেলে শ্রী সন্নাসী দাস।
যার মিটার নং-০০১০৩৮৩০। সন্নাসী দাস জানান, আমি একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসহায় বাসিন্দা। আমি দীর্ঘদিন যাবত গাংনী জোনাল অফিসের আওতায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছি।
বিগত বছর এবং মাসে কখনও ভৌতিক বিল আসেনি। প্রতি মাসেই গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা করে বিল করা হয়ে থাকে। চলতি আগস্ট মাসে ৩০ হাজার টাকার বেশী বিল দেখে আমি হতবাক।
ভুক্তভোগী গাংনী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএমকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, মিটারের রিডিং অনুযায়ী বিল ঠিক আছে। আপনি একবারে দিতে না পারলে মাসে মাসে দিয়ে পরিশোধ করবেন।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে গাংনী জোনাল অফিসের কর্মরত ১৩ জন লাইন টেকনিশিয়ান অফিসে আসেননি। তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করছেন। টেকনিশিয়ানরা কাজে যোগদান না করায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ফলে গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কবে নাগাদ কাজে যোগদান করবেন তাও নিশ্চিত নয়। লাইন টেকনিশিয়ানরা কাজে যোগদান না করলে এই প্রচণ্ড গরমে গ্রাহক আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়বে। মোবাইল ফোনে কল করে একাধিক লাইন টেকনিশিয়ান আব্দুস সবুর, আব্দুল্লাহ, সোহেল রানা, আব্দুর রাজ্জাককে কাজ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা কাজেই আছি, বাসায় খেতে এসেছি। কেউ কেউ আবার অসুস্থতার অজুহাত তোলেন।
তবে, অফিস কর্তা বলেন, তারা কেউ অফিসে এসে আধাঘণ্টা পর আমাকে না জানিয়ে টেকনিশিয়ানরা চলে গেছে। তবে তারা কাজ না করলে গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়বে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম বিজয় চন্দ্র কুন্ডুর নিকট অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অফিসের মিটার বিল রিডিং করার সময় আমাদের স্টাফদের ভুল হতে পারে। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, ৭ জনকে শোকজ করা হয়েছে।