বেরোবি শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ইতোমধ্যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নিশ্চিত করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ওঠার বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে অনীহা রয়েছে। এছাড়া করোনার টিকা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় টিকা গ্রহণের রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতির কারণে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) খোলার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ বলছে পরপর তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে; যার ফলে ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে টিকা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য যে ফরম দেয়া হয়েছিল তা অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেনই না। তাই টিকা সংক্রান্ত যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। শিক্ষার্থীদের টিকা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া সম্ভব। যে উদ্যোগ প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে চলতি মাসেই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এ কথা জানান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের কাছে শিক্ষার্থীদের অতি সম্প্রতি টিকা গ্রহণের কোনো তথ্য নেই। তবে ১০-১৫ দিন আগের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকার দুটি ডোজ গ্রহণ করেছে ১০০৩ জন এবং এক ডোজ গ্রহণ করেছে ৮৯৮ জন। সেই হিসেবে দুই ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ১১ শতাংশ এবং এক ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন ১৩৫ জন (৯৩%), কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে গ্রহণ করেছে ৩৬২ জন (প্রায় ৭০ শতাংশ)।

শিক্ষার্থীদের কত শতাংশ রেজিস্ট্রেশন করে টিকা পায়নি বা কত শতাংশ রেজিস্ট্রেশনই করেননি- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. এহতেরামুল হক বলেন, আমাদের কাছে হালনাগাদ করা এ ধরনের তেমন কোনো তথ্য নেই। তথ্য সংগ্রহ হলে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. কবির হোসেন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণের বিষয়ে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। কারণ তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা যে ফরম দিয়েছিল তা অধিকাংশ টিকা গ্রহণ করা শিক্ষার্থী জানেনই না। তাই প্রশাসনের উচিত তথ্য সংগ্রহে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা, যাতে সব শিক্ষার্থী বিষয়টি অবগত হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদেরও উচিত স্বতঃস্ফূর্তফাবে টিকা গ্রহণ করা।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোন্নাফ আল কিবরিয়া তুষার বলেন, সরকার যেখানে দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে অনীহার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের আমার অনুরোধ তারা যেন যত দ্রুত সম্ভব টিকা গ্রহণ করে এবং যা ক্যাম্পাস খুলে দিতে প্রশাসনকে সাহায্য করবে।

এদিকে চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে সোমবার শিক্ষামন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিফলিত হবে বলে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সরিফা সালোয়া ডিনার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে এক ডোজ করে টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে অনীহা দেখা যাচ্ছে। পর পর তিনবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, যা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। শিক্ষামন্ত্রীর চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘোষণা তো শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে না রেখে, বাস্তবতা পর্যালোচনা করেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে স্কুল-কলেজ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ইতোমধ্যে দেশের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সশরীর পরীক্ষা গ্রহণ অথবা হল খুলে দিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্তত ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসেই খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।