বেহুলা লক্ষিন্দারের গানে ঝুড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো ভয়ংকর গোখরা সাপ

আবহমান বাংলার চিরায়ত বাঙালি সমাজে সাপের খেলা একটি বিনোদনের মাধ্যম ছিল। একই সাথে সাঁপুড়েদের অর্থ উপার্জনও হতো এই সাপ খেলার মাধ্যমে। সাপে কামড়ানো রোগীদের চিকিৎসা, বসবাসের ঘর থেকে সাপ ধরা এবং মনুষা লক্ষিন্দারের গান শুনিয়ে সাপ খেলা দেখানো সাঁপুড়েরা। আধুনীক সভ্যতায় সাপুড়দের আর খুব বেশী দেখা যায়না।

মেহেরপুর পৌর কলেজপাড়া এলাকার ৭৪ বছর বয়সী চেতন আলী সাপুড়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছেন এই সাপের খেলা। এই সাপের খেলা দেখিয়েই চলছে তার পরিবার পরিজনের ভবণ পোষণ।

সোমবার সকালে মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়া মোড় এলাকায় সাপের খেলা দেখাচ্ছিলেন। বাদ্যের তালে তালে বেহুলা লক্ষিন্দারের গানে
ঝুড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে ভয়ংকর গোখরা সাপ। উপস্থিত দর্শকের করতালি যেনো সাপুড়ে চেতন আলীর খেলা দেখানো চেতনা আরো বাড়িয়ে তোলে। শুরু করেন গানের সাথে সাপের খেলা। মন্ত্র আর মনোমুগ্ধকর সাপ খেলা দর্শকদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে।

খেলা দেখানো শেষ হলে তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, এটা আমার বাপ দাদার পৈত্রিক পেশা। আমার আগে আমার বাবা তার আগে তার বাবা সকলেই সাপ খেলা দেখিয়ে জীবন ধারণ করতেন।আগে আয় রোজগার ভালই হতো। সারাদিন খেলা দেখিয়ে ১৫/১৬ কেজি চাল পেতাম। সাথে কিছু টাকা পয়সা পাওয়া যেতো। আজকাল আর সেভাবে টাকা পয়সা পাওয়া যায়না। বছরের তিন চার মাস সাপের খেলা দেখাই। বাকিটা সময় অন্যান্য কাজ করে কোনো মতে আয় রোজগার করি। সাপের খেলা দেখিয়ে প্রতি দিন ৩/৪ শ টাকা ইনকাম হয়। এর মধ্যে সাপকে খেতে দিতে হয়। তাদের ডিম, কবুতরের বাচ্ছা, ইদুরসহ অন্যান্য খাবার দিতে হয়। সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত থাকে। সাপেদের নিয়মিত দাঁত ভেঙ্গে দিতে হয়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকে। তবুও এদের প্রতি এক ধরণের মায়াও কাজ করে।