ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ এর অসঙ্গতি ও দুটি কথা

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ এর অসঙ্গতি ও দুটি কথা

২০২১ সনে ভূমি মন্ত্রণালয় আলাচ্য আইনের খসড়াটি তৈরি করে এবং ১৯.০১.২০২২ খ্রি. তারিখে এই প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি জনসাধারণের মতামতের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে উম্মুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২১ এর প্রথম পৃষ্ঠাতেই ‘যোগসাজস মূলে দলিল সৃষ্টি’ দমনে আইন তৈরির প্রযোজ্যতা আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু যোগসাজস বা কল্যুশন একটি হাইপোথেটিক্যাল বা সাবজেক্টিভ ইস্যু। এটা যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। হলফনামায় দাতা যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বা ঘোষণা দেয় তাতে সকল দায় দাতা বহন করে। প্রেসিডেনসিয়াল অর্ডার ১৪২ দ্রষ্টব্য।

নিবন্ধন আইন ১৯০৮ এর ৮৬ ধারায় সরল বিশ্বাসে কৃত রেজিস্টারিং অফিসারের কার্যক্রম কে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দেওয়া আছে। তদুপরি রেজিস্টারিং অফিসারের সকল কার্যক্রম কে জুডিশিয়াল প্রসিডিং বা বিচারিক কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। একজন বিচারককে যেমন তার কৃতকার্যের জন্য দায়ী করার সুযোগ নেই তেমনি রেজিস্টারিং অফিসারের কার্যক্রম বিচারিক কাজ বিধায় তাকেও কৃতকার্যের জন্য দায়ী করা আইন দ্বারা বারিত। তথাপি এই আইনের মাধ্যমে যে কাউকে যোগসাজসের নামে হয়রানি, জেল-জুলুম অথবা জরিমানা সবই সম্ভব। বিদ্যমান প্রচলিত আইনে এই সকল বিষয়ের বিচার এর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা আদালতের বাইরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করার জন্যই এই আইনের অবতারণা করা হচ্ছে যা অনভিপ্রেত ও অনাবশ্যক।

ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত সাপেক্ষ বিষয় যা কোনভাবেই মোবাইল কোর্ট এর অধীনে হতে পারে না। বিচার বিভাগ কে অনেক সময় প্রতিপক্ষ মনে করে প্রশাসন। ভুল বুঝিয়ে দানপত্র দলিল করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। আসলে এখানে সংশ্লিষ্ট পক্ষ দানপত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তার মানে তারা চেষ্টা করছে খারিজ ছাড়া যেন দলিল না হয় অর্থাৎ তাদের প্রভুত্ব বহাল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার এও স্বীকার করে নেয়া হয় যে ‘দলিল যার, জমি তার।’ একজন মুমূর্ষু ব্যক্তি বা যেকোন ব্যক্তি যার জমি হস্তান্তর করে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ প্রয়োজন অথবা দান/হেবা করা প্রয়োজন তার কি মাসের পর মাস নামজারি খারিজ বা রেকর্ড সংশোধনের নিমিত্তে অপেক্ষার ফুরসত আছে? এসব ক্ষেত্রে দলিল মূলে দানপত্র করার সুযোগ থাকায় জনসাধারণ এর উপকার হয়ে আসছিলো যা প্রস্তাবিত আইনে বন্ধ করার একটা চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার প্রথম পৃষ্ঠা শুরুই হয়েছে কিছু আপত্তিকর ও আদালত অবমাননাকর শব্দ দিয়ে। যেমন: ১ম অনুচ্ছেদে ‘যোগসাজশে সৃষ্ট দলিলমূলে’ এবং ৪র্থ অনুচ্ছেদে “যেহেতু দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে বিচার পাচ্ছে না এবং জনগনের ভোগান্তি হচ্ছে…”। দলিল সংক্রান্ত বিষয়াদি কখনোই ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত নহে এবং দেশের আদালতসমূহকে অক্ষম বর্ণনা করে আদালতের বাইরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচার করার মাধ্যমে আদালতসমূহকে অকার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং একরকম আদালতকে অবমাননা করা হয়েছে। ধারা-২(৪): “আদালত” অর্থ এই আইনের ধারা ২৮ এ বর্ণিত যেকোন আদালত; এখানে ধারা ২৯ হবে, ভুল করে ধারা ২৮ উল্লেখ করা হয়েছে। ধারা ২৯ এ বলা হয়েছে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলে অনর্ভূক্তকরণ সাপেক্ষে, মোবাইল কোর্টের অধীনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া এই আইনে ‘পাওয়ার অব এটর্নি’ শব্দের পরিবর্তে ‘আমমোক্তারনামা’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। আমমোক্তারনামা বলতে জেনারেল পাওয়ার অব এটর্নি বোঝায়। অথচ পাওয়ার অব এটর্নি আইন, ২০১২ এ অনেক ধরণের পাওয়ার অব এটর্নির কথা উল্লেখ আছে।

দলিল সম্পর্কিত ধারাসমূহ নিম্নরূপ:
ধারা-৪: অন্যের জমির মালিক হইবার মানসে জাল দলিল সৃষ্টির দণ্ড।
ধারা-৫: মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদনের দণ্ড।
ধারা-৬: মালিকানার অতিরিক্ত জমি লিখিয়া নেওয়ার দণ্ড।
ধারা-৭:- পূর্ব বিক্রয় বা হস্তান্তর গোপন করিয়া কোন জমি বিক্রয়ের দণ্ড।
ধারা-৮: বায়নাকৃত জমি পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হইবার দণ্ড।
ধারা-৯: ভুল বুঝাইয়া দানপত্র ইত্যাদি সৃজনের দণ্ড।
ধারা-১০: সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করিয়া প্রাপ্যতার অধিক জমির নিজ নামে দলিলাদি সৃষ্টির দণ্ড।
ধারা-১১: সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করিয়া নিজের প্রাপ্যতার অধিক জমি বিক্রয়ের দণ্ড।
ধারা-১৭: অধিগ্রহণের পূর্বে জমির মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত মূল্যে দলিল নিবন্ধনের দণ্ড।

উপর্যুক্ত সকল ধারা দলিল সংক্রান্ত যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নহে। এই সংক্রান্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করবে নিবন্ধন অধিদফতর এর নিয়ন্ত্রণকারী আইন ও বিচার বিভাগ। এমনকি এই আইন প্রস্তুতকালীন মাঠ পর্যায়ে দলিল নিয়ে কাজ করা রেজিস্টারিং অফিসার দূরের কথা মহাপরিদর্শক, নিবন্ধন বাংলাদেশ এর কাছেও কোন মতামত চাওয়া হয় নাই। ধারা-২৬: জমির পরিমাণ ও ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বর্ধিত সাজা। এই ধারায় জমির পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সাজার মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে যা সঠিক হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয়। এটি জমির মূল্য অনুযায়ী হলে বাস্তব সম্মত হতো। এই আইনের কালো ধারা হলো ২৮। ধারা-২৮: অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা ইত্যাদির দণ্ড।

এই অধ্যায়ে বর্ণিত যেকোন অপরাধ সংঘটনে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা প্রদান করিলে তাহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য সহায়তা  প্রদানকারী অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির ন্যায় দণ্ডণীয় হইবেন। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রারিং অফিসার এর সুরক্ষা লঙ্ঘিত হবে এবং মোবাইল কোর্টের নামে প্রাত্যহিক স্বাভাবিক কাজ ও সেবা বিঘ্নিত করা হবে। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলে এই প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের ধারা ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১৭ ও ২০ কোনভাবেই সংযোজিত হওয়া উচিৎ নয়। কেননা এইসব অপরাধের বিচারের জন্য একাধিক সরকারি সংস্থার রেকর্ডপত্রের সংশ্লিষ্টতা থাকে। কেবল পক্ষগণ কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদির উপর ভিত্তি করে এসব অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টের অধীনে সম্ভব নয় এবং সমীচীন নয়। এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রচলিত আদালতে বিদ্যমান আইনে প্রতিকার এর সুযোগ আছে এবং এই নতুন আইনে নতুন কোন ইস্যু নেই যা আদালতের প্রচলিত আইনে বিচার্য নহে।

ধারা-৩০: প্রশাসনিক জরিমানা। সরকার সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তাহার অধিক্ষেত্রাধীন এলাকায় সংঘটিত অপরাধসমূহের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জরিমানা আরোপের ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে। এই ধারায় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পাশাপাশি নিবন্ধনের সহিত সম্পর্কিত অপরাধের ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রারকে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করা হয় নাই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ অধিদফতরের সহকারী পরিচালকগণ জরিমানা আরোপ ও আদায়ের ক্ষেত্রে ক্ষমতাবান।

ধারা-৩২: অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি। এই আইনের অধীন সংঘটিত যেকোন অপরাধের প্রতিকার চাহিয়া ভূমি সংশ্লিষ্ট থানা বা উপযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা যাইবে। ধারা-৩৪: অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ ক্ষমতা। এই ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের এর পাশাপাশি নিবন্ধনের সহিত সম্পর্কিত অপরাধের ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রারকে অন্তর্ভূক্ত করার সুপারিশ করা হয় নাই।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ অধিদফতরের সহকারী পরিচালকগণ জরিমানা আরোপ ও আদেশ প্রদানে ক্ষমতাবান। ধারা-৪৬: আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধকরণ। ধারা ৪৬(৪)-এ নির্দেশনা প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে নোটিং করার কথা বলা হয়েছে। ৪৬(৫): মামলায় পক্ষভূক্ত যেকোন ব্যক্তি আদালত প্রদত্ত রায় বা আদেশের কপি দলিল সংশ্লিষ্ট যেকোন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করিলে উহা গ্রহণ করিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা(৩) ও (৪) এর বিধান অনুযায়ী অবিলম্বে করণীয় সম্পন্ন করিবেন। ৪৬(৬) এ ৪৬(২), ৪৬(৩), ৪৬(৪) ও ৪৬(৫) এর নির্দেশনা পরিপালনের ব্যর্থতার জন্য গুরুদণ্ড শ্রেণিভূক্ত অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেওয়ানি আদালতের আদেশ, ডিক্রি ও রায় মোতাবেক এই ধারার নির্দেশনা বর্তমানেও আমরা পরিপালন করে থাকি। কিন্তু ধারা ৪৬(৫) এর নির্দেশনা পরিপালন করা হইলে পক্ষগণ দ্বারা জালিয়াতি সংঘটিত হতে পারে। এই উপধারা কোনভাবেই সংযোজন হতে পারে না এবং এটা বাঞ্ছনীয় নয়। ধারা-৪৯: সরল বিশ্বাসে কৃত কর্মের জন্য অর্থাৎ এসবের বিচার করতে গিয়ে ভুলে কাউকে অন্যায় জেল বা জরিমানা করা হলেও ইউ এন ও, এসি ল্যান্ডকে দায়ী করা যাবে না। এতে স্বেচ্ছাচারিতা ও অপব্যবহার এর সুযোগ প্রসারিত হবে।

যে কোন মন্ত্রণালয় তার সংশ্লিষ্ট বিষয় এর ব্যাপারে আইন করতেই পারে কিন্তু অন্য মন্ত্রবালয়কে বা দপ্তরকে ছকে ফেলতে চাইলে সেটা হবে দূরভিসন্ধি। ভূমি অপরাধ আইন শুধু দলিল সম্পর্কিত না হয়ে যদি খারিজ খাজনা ইত্যাদি সম্পর্কিত আইন হতো তাহলে কোন আপত্তি হতো না। দলিল তো শুধু ভূমি সম্পর্কিত বিষয়ে হয় না, অন্যান্য বিষয়ের উপরও হয়। প্রস্তাবিত আইনের ০৭ নম্বর ধারা হলফনামার সাথে সাংঘর্ষিক। ৮ নম্বর ধারা সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর পরিপন্থী। ৫৩ (বি) টি পি এক্ট দ্রষ্টব্য। প্রস্তাবিত আইনের ৯ নম্বর ধারায় ভুল বুঝিয়ে দানপত্র শব্দটির কোন ব্যাখ্যা করা হয় নাই। এটি যে কারও বিরুদ্ধে যখন তখন ব্যবহার করা যাবে।

উদ্ভূত সমস্যা সমাধান যেসব বিষয়র দিকে খেয়াল করা যেতে পারে:
১) আলোচ্য আইনের ধারা ৪ থেকে ১০ এবং ১৭, ২৮ একান্তভাবে নিবন্ধন অধিদপ্তর তথা আইন ও বিচার বিভাগের এর আওতাভুক্ত। দলিল নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল ধারা প্রস্তাবিত আইনে বাদ যাবে। যেহেতু এটি ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক একতরফাভাবে সৃজিত এবং তাদের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়াদি ও সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত তাই এই আইন ভূমি নামজারি, খাজনা গ্রহণ, তদন্তে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন প্রদান এবং এডিসি রেভিনিউ বা এডিএম কোর্টে মামলা, ডিসি অফিস এলএ শাখার সেবা, এবং ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জমি বরাদ্দ প্রদানে মনোনয়ন এবং হাট বাজার জলমহাল ইজারা প্রদান এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য উত্তোলিত স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর তথা স্থানীয় সরকার কর সঠিকভাবে বন্টনে অনিয়ম, অপরাধ ও অন্যান্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিষয়াদি নিয়েই শুধু এই আইন হতে পারে। এই আইন প্রস্তুতের সময় মাঠ পর্যায়ে শুধু এসি ল্যান্ড এর কাছে মতামত চাওয়া হয়েছিল এবং কোন নিবন্ধন অধিদপ্তর বা রেজিস্ট্রারিং অফিসারদের এর কাছে কোন রূপ মতামত না চাওয়া এটি রুলস অফ বিজনেস/ এলোকেশন অব বিজনেস লঙ্ঘন করেছে মর্মে বাতিলযোগ্য। দলিল সংক্রান্ত সকল ধারায় দলিল নিয়ে যে বিভাগটি কাজ করছে তার কাছে কোন মতামত না চাওয়ায় এটি একটি বাস্তবতা বিবর্জিত, কেতাবি ও জনবিরোধী আইনে পরিণত হবে। তাই এটি সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিলযোগ্য।

২) প্রস্তাবিত আইনে ধারা ২৮ একটি কালো আইন। এটি নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ এর ৮৬ ধারা ও নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৪ এর ৪২ বিধি এর সাথে সাংঘর্ষিক। তদুপরি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ৪৯ ধারা এর মাধ্যমে যে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে তাতে এই আইনের অপব্যবহার হবে এবং ভুক্তভোগীর কিছুই করার থাকবে না।

৩) দলিল সংক্রান্ত সকল অপরাধ নিবন্ধন অধিদপ্তর তথা আইন ও বিচার বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় এই সম্পর্কিত অপরাধ প্রতিকারে আইন ও বিচার বিভাগ “নিবন্ধন আইন (সংশোধিত) ২০২৩” প্রণয়ন ও পাস করতে পারে।

৪) যেখানে সারাদেশে বিচারিক কাজ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন বিচার বিভাগের কাছে ন্যস্ত করার কথা আলোচনা করা হচ্ছে, মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার বিলুপ্তির কথা বলা হচ্ছে এবং বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ থেকে এই বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে এটি বন্ধে ইতোমধ্যে আদেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে মোবাইল কোর্টকে আরও ক্ষমতায়ন ও দানবিক রূপ দেবার প্রচেষ্টা প্রস্তাবিত ভূমি অপরাধ দমন ও প্রতিকার আইন, ২০২১-এ করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ভয়ানক রূপ লাভ করবে; তাই এটি আংশিক বাতিলযোগ্য।

৫) জমি রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত অপরাধের বিচার করতে আইন করবে সংশ্লিষ্ট আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ব্যতীত করা এই ভূমি অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের চেষ্টা সম্পূর্ণ বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূত।

৬) বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতার কথা উল্লেখ করে তা নিরসন করার কথা বলে এই প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বিচার বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দেওয়ানি আদালতের বিচার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে করিয়ে জুডিশিয়ারির বিচারের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে নেয়ার প্রচেষ্টাকারী এই আইন সরাসরি সংবিধানের ২২ ধারার স্বাধীন বিচার বিভাগ এর অস্তিত্বের সাথে সাংঘর্ষিক।

৮) ভেটিং শাখা, আইন বিচার ও সংসদ বিষিয়ক মন্ত্রণালয় উক্ত প্রস্তাবিত আইনের খসড়া বাতিল বা অধিকতর সংশোধনের জন্য এই বলে ফেরত পাঠাতে পারে যে, The Land Ministry must limit its proposed law to its prescribed functions or regular responsibilities. The sections that corroborate issues related to deed or instrument fall into the business of Department of Registration under the control of Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs; and thus deserve to be scrapped as opinions from the concerned ministry were not asked for and no dialogue was held with. However,  issues related to deed or instrument  mentioned in the proposed law can be addressed by enacting Registration Act (Amendment) 2023 that will confer the required power on its own officers.

লেখক: আইনবীদ