ভোরে সাংবাদিক গ্রেফতার, বিকালে জামিন

মেহেরপুরের গাংনীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক আল আমীনকে জামিন দিয়েছে আদালত।
শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বেগম রাফিয়া সুলতানার আদালতে জামিন আবেদন করলে জামিন মঞ্জুর করে আদালত। জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক গোলাম মোহাম্মদ। আসামী পক্ষের ছিলেন আইনজীবি শফিকুল আলম।

এর আগে গতকাল শনিবার ভোরে গাংনী পৌর শহরের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আল আমিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি। তিনি মেহেরপুর প্রতিদিনের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।

উল্লেখ্য : ২০২০ সালের ১১ মে স্থানীয় দৈনিক মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকায় গাংনীর সাবেক এমপি মকবুলের কান্ড; ২৬ বছর দখলে রেখেছেন পরের বাড়ি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গাংনী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ভাগ্নে সবুজ হোসেন বাদী হয়ে গাংনী থানায় মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এম এ এস ইমন, সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন ও যুগ্ন সম্পাদক আল আমীনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ১২ তাং ১৩-০৫-২০২০ইং।

মামলায় আসামিরা নিম্ম আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। পুলিশ গত ৯ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত পরিবর্তন হয়ে মামলাটি সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। এদিকে মামলাটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হওয়ার পরপর লকডাউনের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন নেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এদিকে মামলাটি সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হওয়ার কারণে নিম্ম আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার এস আই সুমন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় আদালতের পরোয়ানা থাকায় সাংবাদিক আল আমিন হোসেনকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে সাংবাদিক আল আমীনকে গ্রেফতার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান মেহেরপুরের সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এসময় তারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সরকার পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে চাই। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরতে এই কালো আইন। এ আইনকে দ্রুত সংশোধন অথবা বাতিল করার ব্যবস্থা করার আহবান জানান।

তবে মেহেরপুর প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের জেরে দায়ের করার মামলায় গতকাল প্রতিবেদক আল আমীন গ্রেফতার হলে পুনরায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে। গতকাল সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন তার কবল থেকে বাড়ির মালিক বাড়িটি ফিরে পেলেন। সংবাদের প্রকাশের কারণে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জেরে তিনি বাড়িটি ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

কি পরিচয় এম এ এস ইমনের
মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এম এ এস ইমন। তাঁকেও বাদ রাখা হয়নি এ মামলার আসামি থেকে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ে ছাত্রলীগকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়ে যাওয়া লড়াকু ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ সম্পাদক, পরপর তিনবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড (পেট্রোবাংলার একটি প্রতিষ্ঠান) এর সাবেক বোর্ড পরিচালক, মেহেরপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়ন আন্দোলন ফোরামের মুখপাত্র, ঢাকাস্থ মেহেরপুর জেলা কমিউনিটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, আনিশা গ্রুপের চেয়ারম্যান।

যে সংবাদের কারণে মেহেরপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ইয়াদুল মোমিন, প্রকাশক এম এ ইমন ও প্রতিবেদক আল আমীনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সংবাদটি প্রকাশ হয়েছিল ২০২০ সালের ১১ মে, এবং মামলা হয়েছিল ১৩ মে।সে সংবাদটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে পুনরায় হুবুহু প্রকাশ করা হলো।

গাংনীর সাবেক এমপি মকবুলের কান্ড; ২৬ বছর দখলে রেখেছেন পরের বাড়ি মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের দুই বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন ২৬ বছর ধরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকলেও নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেন না। এমনকি বাড়ি ছাড়া তো দুরের কথা সংস্কার করতেও দেন না বাড়ির মালিককে।

গাংনী পৌরসভা থেকে কয়েক দফা বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হলেও তিনি বাড়ি ছাড়েননি। বাড়িটি সংস্কারের ব্যবস্থাও নেননি। বাড়ি ছাড়া নিয়ে মালিকের সাথে দফায় দফায় গন্ডগোল, ঝামেলা হলেও তিনি ক্ষমতাবলে বাড়িটি অন্যায় করে দখল করে রেখেছেন।

প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় বাড়ির মালিক সাবেক এ এমপি’র নির্যাতন নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। নিরবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। খুব দ্রুত বাড়িটি মকবুল হোসেনের কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিতে চান বাড়ির মালিক জিনারুল ইসলাম। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবেন কে?

বাড়ির মালিক জিনারুল ইসলাম অভিযোগ করে মেহেরপুর প্রতিদিন কে বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে সাবেক এমপি মকবুল হোসেন মৌখিক ভাবে গাংনী শহরের উত্তরপাড়ায় দ্বিতল বিশিষ্ট তার বাড়িটি ভাড়া নেন। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ভাড়া দেননা। মনকি মাঝে মধ্যে বাড়িটি সংস্কার করতে চাইলেও তিনি তা করতে দেননি। ক্ষমতাশালী হওয়ায় বাড়িটি ছাড়িয়েও নিতে পারছি না। বাড়িটি দ্রুত সংস্কার করার প্রয়োজন।

সংস্কার না করলে যে কোন দুর্যোগে ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে। অনেক বার বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তিনি কান দেননি। এমনকি তার পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে থাকেন।

মালিক জিনারুল ইসলাম আরো বলেন, বাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য একজন উকিলের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতাবান মানুষের সাথে পারবেন না বলে তিনি মামলা করতে রাজি হননি।

যে কোন অবস্থায় বাড়িটি সাবেক এমপি মকবুল হোসেনর কাছে থেকে তারা মুক্ত করতে চান। তিনি আশংকা করছেন কোটি টাকার সম্পত্তিটি তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায় কিনা। মাস ছয়েক আগে সাবেক মেয়র আহমেদ আলী ও বামন্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামকে নিয়েও একটি সালিশ বসে। তখনও তিনি বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন, কিন্তু ছাড়েননি।

এ ব্যপারে বামন্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, বাড়িটি নিয়ে মিমাংসা হয়েছিল। বাড়িটি ছেড়ে দেবেন বলে সাবেক এমপি সাহেব কথাও দিয়েছেন। কিন্তু কবে ছাড়বেন জানেন না।

স্থানীয় কাউন্সিলর নবির উদ্দিন বলেন, দির্ঘদিন ধরে সাবেক এমপি মকবুল সাহেবের সাথে বাড়ির মালিক জিনারুলের সাথে বাড়ি ছাড়া নিয়ে গন্ডগোল হয়। তবুও তিনি বাড়ি ছাড়েন না।

গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগের মেয়র থাকতেই মকবুল সাহেবের বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে নোটিশ দিয়েছেন। সেই নোটিশের আলোকে আমরা কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়েছি তবুও তিনি সংস্কার করার জন্যও বাড়িটি ছাড়েননি। বাড়িটি অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় বাড়িটি ভেঙে প্রাণহানী ঘটতে পারে। তবুও তিনি অন্যায় করে বাড়িটি দখলে রেখেছেন।

মেহেরপুর জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন জানান, বহু পুরাতন ঝামেলা এটি। এই বাড়ি নিয়ে বহুবার ঝামেলা হয়েছে। তবুও সাবেক এমপি সাহেব বাড়িটি ছাড়েন না।

এ ব্যাপারে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনের সাথে মেহেরপুর প্রতিদিন থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নামায পড়ছি পড়ে ফোন দেন। কিন্তু পরে ফোন দিলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।