ভয়ঙ্কর যুবলীগ নেতা মিঠু!

ভয়ঙ্কর যুবলীগ নেতা মিঠু!

চাঁদাবাজি, বোমাবাজি, চুরি, নির্যাতন, হত্যা, নারী লোভী এমন কোন অপরাধ নেই যে নামের সাথে জড়াননি মিঠু। এত অপকর্মের হোতা আরিফুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে এবার ফূঁসে উঠেছে গ্রামবাসী। অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম মিঠু মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মহাজনপুর গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, বোমাবাজিসহ ৫টি মামলা চলমান রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মহাজনপুরে এসকল অপকর্ম তুলে ধরে তার থেকে রক্ষা পেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে স্থানীয় রাজনীতিবীদ ও গ্রামবাসীরা। মানববন্ধনে প্রায় দুই শতাধিক নারী পুরুষ অংশ নেন। তবে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে আত্মগোপনে রয়েছেন অভিযুক্ত আরিফুল ইসলাম মিঠু।

মানবন্ধনে মিঠুর বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরে বক্তব্য দেন, মহাজনপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সোহরাভ হোসেন কালু, ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. ফিদু, সাবেক সদস্য জহুরুল ইসলাম স্বপন, সাবেক সদস্য আব্দুল হান্নান, মুজিবনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহবায়ক শেখ মিসকিন, মুজিবনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, মহাজনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ইমাম হোসেন ইমন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গণি, আব্দুল বারি, মজিবার রহমানম, বিএনপি নেতা আমির হোসেন, মসজিদের ইমাম মো. আজবাহার, যুব মহিলালীগ নেত্রী গুলশানারা রুনু, স্থানীয় অঅনারুল ইসলাম, সায়েম খন্দকার প্রমুখ।

মানববন্ধনে তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, সাংসারিক অভাব অনটনের কারণে মিঠু মামাদের পরিবারে থেবে বেড়ে ওঠে। তার মামা ইজারুল ইসলাম ও মো. এনামূল হকের ছত্রছায়ায় অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন অপকর্মে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। যতবার অপকর্ম করেছে তারা মামারা তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করেছে।

বিভিন্ন সময়ে চাঁদা না দেওয়ার কারণে আব্দুল গণিকে মহাজনপুর হাটে প্রকাশ্য পিলারের সাথে বেধে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে মিঠু। মহাজনপুর উত্তর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবেদ আলীর বাড়িতে বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বাবপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের সদস্য রতন চাঁদা দিতে না পারায় মিঠু নিজেই রতনের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে। যে মামলা আদালতে বিচারাধীন।

মহাজনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে তিন অভিভাবক সদস্য প্রার্থীকে রাতের অন্ধকারে পিস্তল ঠেকিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিলো মিঠু। একই বছরে সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মোছা. গুলতা খাতুনের বাড়ি জবর দখলে নিয়ে নিজে ঘর তৈরি করে। মহাজনপুরের সার ও ডিজেল ব্যবসায়ী সুবোল চন্দ্র সাহা হত্যা মামলারও আসামি মিঠু।

মহাজনপুর ইউপি নির্বাচনের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী মোঃ সোহরাব হোসেন কালুর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর জন্য হুমকি প্রদর্শন করে। একই বছর তার শ^শুর বাড়িতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিটিং চলা অবস্থায় তৎকালীন মুজিবনগর থানার ওসি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘেরাও করলে সে কয়েক রাউন্ড গুলি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়।

গত বছর নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী ফিদুর ভাড়ায় চালিত মাটিকাটার যন্ত্র এক্সকাভেটর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং দুই বিঘা কলা ও পেঁপে গাছ রাতের অন্ধকারে কেঁটে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে মিঠুর বিরুদ্ধে। প্রতিবেশী দিনমজুর ফজলু তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজ গ্রাম ছেড়ে ভবানীপুর গ্রামে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। চলতি বছরের গত ২৮ মার্চ হেলাল উদ্দীন তাপুর মহাজনপুর হাটের কাছে অবস্থিত বাড়ি মিঠু তার মামাদের সহযোগীতায় ভাংচুর করে এবং বাড়ি সংলগ্ন দোকানের মালামাল লুটপাট করে। তাপুর মামা আব্দুল মান্নান এর প্রতিবাদ করায় পরদিন ২৯ মার্চ বিকালে মিঠু আব্দুল মান্নানকে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। গ্রামে মিঠু এবং তার পরিবার ক্যাসিনো সম্রাট (অনলাইন জুয়া) নামে পরিচিত। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংক এবং চ্যানেল দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম মিঠুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সে আত্মগোপনে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে মুজিবনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান চাদু বলেন, মহাজনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করে জেলা কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মুজিবনগর থানার ওসি মেহেদী রাসেল জানান, আরিফুল ইসলাম মিঠুর নামে সম্প্রতি একটিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।