মাঝারি তাপদাহে পুড়ছে মেহেরপুর

মাঝারি তাপদাহে পুড়ছে মেহেরপুর

মেহেরপুরে প্রায় এক সপ্তাহের বেশী তীব্র তাপদাহে মানুষ থেকে শুরু সকল প্রাণীকুল হাসফাঁস শুরু হয়েছে। জেলাতে প্রতিদিনই বাড়ছে তাবদাহের দাপট। কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস চারদিক। সেই সঙ্গে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তাপদাহ ও প্রচন্ড গরমে রোজাদারদের কাছে ইফতারিতে ডাব, বেল, আনারস, আখের রসের চাহিদা বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১২ টার সময় চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩ টার সময় মেহেরপুর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ০৯ শতাংস। এর আগে বেলা ১২ টার সময় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দতা ছিল ১২ শতাংস। আরও এক সপ্তাহ যাবৎ এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, ২০ তারিখের পর তাপমাত্রা কমতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে জেলার তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র হতে পারে। একই সঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

এদিকে প্রচন্ড গরম ও তীব্র তাপদাহে মেহেরপুর জেলা শহর, গাংনী উপজেলা শহর ও মুজিবনগর উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ও হাটবাজারে আখের রস, বেল, তরমুজসহ অন্যান্য সরবত জাতীয় পানীয়র বিক্রি বেড়েছে।

জানা গেছে, গত ৯ দিন ধরে এ জেলায় তাবদাহের দাপট দিন দিন বাড়ছে। সকাল থেকেই সূর্য্যের প্রচণ্ড তাপে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রুক্ষ। সেই সঙ্গে রোদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম। সূর্য্যের প্রখর তাপে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এক প্রকার যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হলেই গরম বাতাস বিধছে আগুনের হুংকারের মতো।

অনেকে সামান্য স্বস্তির জন্য ছুটে চলেছেন গাছের ছায়া তলে। গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুলও। তবে এ তাপদাহের কারণে অনেকটাই বিপাকে পড়ছে রোজাদারসহ নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া লোকজন।

গাংনী বাজারের ক্রেতা আব্দুর রহিম ও জালাল উদ্দীন এসেছিলেন বেল ও আখের রস কিনতে। তারা দুজনেই জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে এখন বেলের দামও বেড়েছে আকাশচুম্বি। ছোট ছোট বেল পাওয়া যাচ্ছে ৩০ টাকা, মাঝারী বেল ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বড় সাইজের বেল কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তারপরেও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছেনা।

জেলা শহরের বড় বাজার এলাকায় ডাব কিনতে আসা তাইজেল হোসেন জানালেন, এই তীব্র গরমে ইফতারের সময় একটু আখের রস খেতে পারলে ভাল লাগে। কিন্তু আখের রস আগে এক গ্লাস ১০ টাকা ছিল। এখন সেটা বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। এছাড়া এক একটা ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

গাংনী হাসপাতাল বাজার এলাকার ডাব বিক্রেতা শিশিরপাড়া এলাকার আমিরুল ইসলাম ও রুহুল আমিন বলেন, একটা ছোট সাইজের ডাব ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং বড় সাইজের একটা ডাব ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি। এই প্রচন্ড গরমে ডাবের চাহিদা বাড়ায় আমরা বেশি দাম দিয়ে গাছ মালিকদের কাছ থেকে ডাব কিনে আনছি। তাই ডাবের বাজার অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই সময় বেশী।

আনারস ব্যবসায়ী শামীম জানান, এই সময়ে আনারসের চাহিদা বাড়ছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ যখন আলসে হয়ে পড়ে। তখন আনারুস খেয়ে শরীরের ক্লান্তিতা দুর করেন।

আখের রস বিক্রেতা জাহারুল ইসলাম বলেন, বছরজুড়ে আখের রস বিক্রি হলেও রোজা আসার পর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সবের ভালো চাহিদা বেড়েছে। দৈনিক ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকার রস বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। জাহারুল ইসলাম আরও বলেন, এমনিতেই পাড়া মহল্লায় আখের রসের ভালো চাহিদা রয়েছে। তবে রোজা আসায় তার বিক্রি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতি গ্লাস আখের রস ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর এক লিটার রস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। দৈনিক ২ হাজার টাকা বিক্রি করছেন বলে জানান।

সরবত বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, রোজার শুরুতে স্বাভাবিকভাবে অন্য সময়ের মতো সরবত বিক্রি হয়না। ইফতারির সময় সারাদিনের বিক্রি একবারে হয়ে যায়। তারপরেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।