মাদক বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে শিশুরা!

এম এফ রুপক:
মরণনেশা ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড্রের মদসহ বিভিন্ন মাদক বহন করা হচ্ছে অভিনব কৌশলে। বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের। সীমান্তের কয়েক কিলোমিটার দুরে গিয়ে কিশোরদের হাত বদল হয়ে যাচ্ছে আরেক বহনকারীর হাতে। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় ভাড়া করা হচ্ছে এইসব স্কুল পড়ুয়াদের। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনেকটা অভাবের তাড়নায় এই পথে পা বাড়াচ্ছে তারা। রাতের আধারে বিজিবি বা অন্য কোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির চোঁখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে মাদক পৌছে দিচ্ছে কিশোররা। মাঝে মধ্যে বিজিবি’র তাড়া খেয়ে মাদক ফেলে পালিয়েও যাচ্ছে তারা।

এ নিয়ে অনেক সময় বহন খচর নিতে ঝামেলাও হয়েছে বলে জানিয়ে এক কিশোর। গাংনীর সীমান্তবর্তী এলাকা কাজীপুর, তেতুলবাড়িয়া, রংমহল, খাস মহল মাদক চালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

খাস মহলের ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া রাসেল (ছদ্ম নাম) জানান, সীমান্তের কাঁটাতার থেকে এক কিলোমিটার মতো দুরে নিদিষ্ট স্থানে মাদক দিয়ে আসতে পারলেই এক থেকে দেড় হাজার টাকা পাওয়া যায়। আমি সহ আমার তিন জন বন্ধু বেশ কয়েকদিন বহন করে দিয়েছি। এক দিন দেড় হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে ৫’শ টাকা দেয়।

এ নিয়ে তাদের সাথে ঝামেলা হয়। তারপর থেকে আর বহন করি না। কিন্তু এখন রাতে বাড়িতে ঘুমানোর সাহস হয় না। কারা এই টাকা দেয় জানতে চাইলে রাসেল বলে, মোবাইলের মাধ্যমে কথা হয়। মাঝে মধ্যে গ্রামেরই কেউ কেউ টাকা দেয়।

খাস মহলের ১৭ বছরের অটো চালক সালমান (ছদ্ম নাম) জানান, আমাদের বয়সি বা আমাদের চেয়ে কম বয়সি গ্রামের বেশ কয়েকজন মাদক বহনের সাথে জড়িত। প্রতি ১’শ বোতল ফেন্সিডিল কাঁটাতার থেকে গ্রামের মধ্যে আনতে পারলে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। কোন কোন উৎসবের সময় চাহিদা বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে বহন খরচ আরও বেশি দেওয়া হয়। আমাদের শুধু জায়গা বলে দেওয়া হয়। ওপার থেকে সেই জায়গায় আগে থেকেই মাদক ফেলে রাখে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

মাদক বহন করতে গিয়ে অনেকেই এখন মাদকাসক্ত হয়ে গেছে। এমনি একজন খাসমহল গ্রামের মাদকাসক্তের বোন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার ভাই নতুন ৯ম শ্রেণীতে উঠলো। মাঝে মধ্যে আমাদের অজান্তেই মাদক বহন করতো। এভাবে বহন করতে গিয়ে সে এখন মাদকাসক্ত হয়ে গেছে। প্রায় প্রতি রাতেই গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন করে বাড়ি ফেরে।

এ বিষয়ে মেহেরপুর মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমাদের জনবল কম থাকায় হয়তো অনেক কিছু এড়িয়ে যায়। সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাদক সংক্রান্ত সচেতনতা মূলক প্রচার ও সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে করে শুধু শিশুরাই না, কেউই যেন মাদকের সাথে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি জুলফিকার আলী জানান, এই ধরণের কোন তথ্য আমাদের কাছে এখনো আসেনি। তবে সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের সুযোগ্য পলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলীর স্যারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ থেকে সীমান্ত এলাকায় ইতিমধ্যে মাদক সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় সোচ্চার আছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে। তবে শিশুরা যেন মাদকের সাথে যুক্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনে আমরা ঐ সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বেশি বেশি মাদক সচেতনতামূলক অভিযান চলাবো।