
মেহেরপুরে অশতিপর মায়ের সাথে প্রতারণা করে জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন শিক্ষক সন্তান। অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন বাবু মেহেরপুর সদর উপজেলার হাতিভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং কোলা গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে। তার এ প্রতারণায় সহযোগীতা করেছেন তার চাচা শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম ও স্ত্রীর ভাই পুলিশ কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম রিপন। রিপন বর্তমানে কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশে এস আই হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ ঘটনায় বৃদ্ধা মায়ের অনুমতিতে মেহেরপুরের আমলী আদালতে মামলা করেছেন বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম। যার মামলা নম্বর ৪১৫/২০২৫ ।
মামলাটি মেহেরপুর সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটি তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদনের আসামি আলমগীর হোসেন ও তার চাচা শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলামকে অভিযুক্ত আদালতে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা। প্রতিবেদন পেয়ে আদালত আসামি আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন। দীর্ঘদিন তিনি পলাতক থেকে সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন।
মামলার এজাহারে বাদী জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, আমার মা একজন অতিবৃদ্ধ এবং তিনি স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পূর্ণ মানুষ। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আমার মা একটু অসুস্থবোধ করিলে আমার ছোট ভাই আসামী মুহাঃ আলমগীর হোসেন আমার মাকে মেহেরপুর শহরে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে মেহেরপুর রেজিষ্টারী অফিসে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে লিখে রাখা দলিলে আমার মা স্বাক্ষর করিতে জানা স্বত্তেও জোরপূর্বক টিপসহি নেয়।
মা প্রতিবাদ করিলে সে মায়ের কোন কথা শোনেনা। মা বাড়ি ফিরে আমাকে , আমার বোন ও পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানালে আমি মেহেরপুর সাব রেজিষ্টারী অফিস হইতে ৭৬৩/২০২৫ নং দলিলের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ কর জানতে পারি আমার ছোট ভাই আসামী মুহাঃ আলমগীর হোসেন আমার মায়ের নামীয় বামনপাড়া মৌজার আর এস ১৬০৭ ও আর এস ১০২৯৫ খতিয়ানের ৩৮ শতক জমি নাবালক পুত্র মুহাঃ আশিক আলমগীর ও মুহাঃ আবরার আলমগীরের নামে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে।
যে জমির মূল্য বর্তমান বাজারমূল্য এক কোটি হবে। বিষয়টি জানার পর আমি ও আমার বোনরা মায়ের জমি ফেরত অথবা জমির মূল্য বাবদ এক কোটি পরিশোধ করার জন্য আসামিকে অনুরোধ করি। কিন্তু সে জমি ফেরৎ কিংবা টাকা পরিশোধ না করে আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণ ও খুন জখমের হুমকি পদান করে।
বাদীর মা বৃদ্ধা জাহানারা বলেন, আমাকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে শহরে নিয়ে জোর করে টিপসহি দিয়ে ৩৮ শতক জমি রেজিষ্টি করে নিয়েছে ছোট ছেলে আলমগীর হোসেন বাবু। তার সাথে ছিল ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম। আমার খাসির মাথা (দামি জমি) জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। আমি বাড়ি এসে বড় ছেলে ও মেয়েদেরকে বললে ছোট ছেলে ও ছেলের বউ খারাপ আচরণ করে।
বৃদ্ধা আরও জানান, আমি বাবা সই (স্বাক্ষর) করতে পারি। কিন্তু আমাকে সই করতে না দিয়ে হাতটা মুচরিয়ে ধরে টিপসহি করে নিয়েছে।
বাদী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মা বৃদ্ধা হওয়াতে আমাকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। যে দিন মামলা করেছি শুনেছে সেদিনই আমার মা ও ছোট বোন শেফালিকে ছোট ভাই আলমগীর ও তার বউ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তারপর থেকে মা ও আমার ছোট আমার বাড়িতে আছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, বাবা -মায়ের সম্পত্তি তার সকল সন্তানই পাবেন। আমরা বারবার তাদের সাথে মিমাংসা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি যে যতটুকু সম্পত্তি পাবে সে হিসেবে বন্টন করার জন্য অথচ সে মিমাংসাতে রাজি হয় না। আমরা এখনো চাই বাবা মায়ের সম্পত্তি নিয়ে আইন আদালতের ঝামেলা যাতে না হয়। এলাকার মেম্বারকেও বলেছি কিন্তু তারা কারো কথা শোনে না।
অভিযোগের বিষয়ে আলমগীর হোসেন মেহেরপুর প্রতিদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম ও পুলিশ কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এসময় তারা মিমাংসা করার বিষয়ে রাজি হলেও নানা অজুহাতে দিনপার করতে থাকে।
পরবর্তিতে আসামি আলমগীর হোসেন মেহেরপুর প্রতিদিনকে ফোন করে জানান, বিষয়টি নিয়ে বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের সাথে কথা হয়েছে আমরা মিমাংসা করে নেব।
কিন্তু মামলার বাদি জাহাঙ্গীর আলম জানান, মিমাংসার বিষয়ে আসামিপক্ষ কোন আগ্রহ দেখায়নি। এদিকে, প্রতারণার এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মায়ের সাথে কথা বলার জন্য কোলা গ্রামে গিয়ে যায় মেহেরপুর প্রতিদিনের একটি টিম। তার মা ও বোনরা জানান, আসামি আলমগীর হোসেন তার বাবার নামিয় ৫ বিঘা জমি জাল সাক্ষর করে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়েও তারা আরও একটি পৃথক মামলা করেছেন।
যে মামলায় আলমগীর হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম রিপনসহ ৬জনকে আসামি করা হয়েছে। মায়ের সাথে প্রতারণার আগেও তার বাবার সাথে প্রতারণা করেছেন কিনা এ বিষয়ে আগামী পর্বে সেটি তুলে ধরা হবে।


