মিলমালিকদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠকের পরও কুষ্টিয়ায় কমেনি চালের দাম

সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানছে না কুষ্টিয়ার খুচরা চাল ব্যবসায়ীরাও। প্রশাসনের কড়া নজরদারি, মিলমালিকদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠকের পরও চালের দাম কমছে না কুষ্টিয়ায়।
বাজারে চিকন চাল কেজিতে এক/দুই টাকা ও সব ধরনের মোটা চালে কেজিতে দুই/তিন টাকা বেড়েছে।
এ দিকে মিল গেটে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। এতে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে অস্বস্তিতে।
মিলমালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধানের দাম না কমার কারণে চিকন চালসহ অন্য চালের বাজার কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বাড়ছে। মিনিকেট চাল কেজিতে এক/দুই টাকা ও মোটা সব ধরনের চাল কেজিতে দুই/তিন টাকা পর্যন্ত মিল গেটে দাম বেড়েছে। ধানের বাজার বাড়লে চালের বাজার সমন্বয় করতেই এ দাম বাড়ানো হয় বলে জানান মিলমালিকরা।
তারা বলেন, সরকার চালের দাম বেঁধে দিলেও ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম আশানুরূপ কমেনি।
লিয়াকত রাইস মিলের মালিক হাজি লিয়াকত হোসেন বলেন, মিনিকেট ধান কিনতে হচ্ছে ১৩০০ টাকায় আর কাজললতা ১২শ টাকায়। প্রতি মণে ৫০ টাকা বেড়েছে ধানের দাম। সেই কারণে চালের দাম মিল গেটে বেড়েছে। চিকন জাতের মিনিকেট চাল ২৫ কেজির প্রতি বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩২০ থেকে ১৩৩০ টাকা। প্রতিকেজি চালের দাম পড়ছে ৫২.৮০ টাকা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা থেকে ৫৫ টাকা। কোথাও আরও বেশি। এছাড়া কাজললতা ৫০ টাকা, আটাশ ৪৮ থেকে টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চাল বিক্রির চেষ্টা করছি। ধানের দাম বৃদ্ধি ও ক্যারিং খরচের কারণে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যে কারণে অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার খাজানগর মোকামে মিনিকেট চাল মিল গেটে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, একইভাবে কাজললতা ৫০ টাকা, আটাশ ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়।
এ দিকে খাজানগর মোকামে চালের দাম বাড়লেও মনিটরিং দলকে এখন পর্যন্ত কোনো মিলে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি। মনিটরিং জোরদার করা হলে বাজার স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি দামও কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান জানান, চাল ব্যবসায়ীগণের অংশগ্রহণে একটি সচেতনতামূলক সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ এবং পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীগণকে সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত অনুশাসন এবং নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ যথা নিয়মে প্রতিপালন করার অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় জেলা চেম্বার অব্ কমার্স এর প্রতিনিধিসহ বড় বাজার ও পৌরবাজার বণিক সমিতি কুষ্টিয়ার সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং জোরদার করেছি। মিলমালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছি। কেউ যদি সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকে বেশি দামে বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে যদি কোনো মিলমালিক অতিরিক্ত লাভ করে থাকলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, বছরের একটা সময় আসে যখন মিলমালিকরা হুট করে চালের দাম বাড়িয়ে দেন। তারা দু-এক সপ্তাহে ফায়দা লুটে লাখ লাখ টাকা আয় করে নেন। যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর। এবারও এমন ঘটনা ঘটছে।