
পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচা ও তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত বদ্ধ পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, মশা উৎপাদনের উৎসস্থল, বিষধর সাপের উৎপাতসহ নানা সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের ফরিদপুর পাড়ার পানিবন্দি ১০টি পরিবার। এদের যেন দেখার কেউ নেই, খোঁজ নেওয়ারও কেউ নেই।
চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরাসরি গিয়ে দেখা যায় চলাচলের রাস্তায় পচা দুর্গন্ধময় হাঁটুপানি। সেই পানিতে পরিবারের সদস্যরা ও শিশুরা চলাফেরা করছে।
পানিবন্দি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনন্দবাস গ্রামের মৃত শ্রী অনন্ত মণ্ডলের ছেলে ডোবার মণ্ডল ও খোকা মণ্ডল তাদের বাড়ির পাশের ডোবাটি ভরাট না করে রেখেছেন। তারা উঁচু জায়গায় বসবাস করলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা করেননি। এর ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে অপর পাশের প্রায় ১০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানিতে গরু-ছাগলের মলমূত্র মিশে পচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। এই পানিতে মশা-মাছি ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বাস।
স্থানীয়রা জানান, পানির দুর্গন্ধে খাওয়া-দাওয়া করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বাচ্চারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়ে। রাতে ভয়ে ঘুমানো যায় না। বাচ্চাদের নিয়ে সর্বদা আতঙ্কে থাকতে হয় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
হাঁটুপানিতে বসবাস করছেন স্বামী পরিত্যক্ত শহিদা খাতুন, মৃত সবুর আলীর মেয়ে। ডোবার পাশেই তার ছোট্ট একটি নড়বড়ে টিনের ঘর। আত্মীয়-স্বজন না থাকায় তিনি একাই সেখানে থাকেন। সরেজমিনে দেখা যায়, তার ঘরের ভেতরেও পানি জমে আছে। পানির ওপর একটি চৌকির ওপর তিনি কষ্টের জীবনযাপন করছেন। রান্না করা বা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর কোনো জায়গা তার নেই।
তিনি জানান, খুব কষ্টে পোকামাকড়ের মধ্যে থাকি। মেম্বার-চেয়ারম্যানকে বলেছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি দ্রুত যেন এই কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পানিবন্দি আরেক পরিবারের গৃহবধূ নুরজাহান খাতুন, স্বামী মোজাফফর আলী, বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। বাড়ির ভেতরেও পানি, পেছনেও পানি। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাচ্চারা ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুর্গন্ধে খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। আমার ছয় মাসের একটি শিশু আছে ভয় হয়, যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুক, যাতে আমাদের স্বাভাবিকভাবে বসবাস সম্ভব হয়।
প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম বলেন, ওদের কষ্ট চোখে দেখা যায় না। ছোট বাচ্চারা কোমরসমান পানিতে হেঁটে স্কুলে যায়। বাড়ির মহিলারা হাঁটুপানিতে চলাচল করে। পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব, মাঝে মাঝে বিষধর সাপও দেখা যায়। আমার অনুরোধ, প্রশাসন যেন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিয়ে তাদের একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পলাশ মণ্ডল বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশকে সেখানে পাঠাচ্ছি পরিবারের খোঁজখবর নিতে। পরে ইঞ্জিনিয়ারসহ রাস্তাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।