মুজিবনগরে ব্র্যাকের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা

মেহেরপুরের মুজিবনগরে ব্র্যাক এনজিও’র দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এক দিকে যেমন আয় রোজগার কমে গিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে অন্য দিকে এনজিও গুলোর দৌরাত্মে চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষের।

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি আদায়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মুজিবনগরে জোর পূর্বক গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করছে ব্র্যাক অফিস। জোরপূর্বক কিস্তি আদায় না করার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে কিস্তি আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ব্রাকসহ অধিকাংশ এনজিও সংস্থা। এরই মধ্যে কিস্তির টাকা আদায় নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে ব্র্যাক কর্মির উগ্র আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদের ঘটনা ঘটেছে।

গৌরিনগর গ্রামের সাবিরিন রহমান একটি কম্পিউটার ল্যাব দেওয়ার জন্য কয়েকমাস আগে তার খালার নামে ব্র্যাকের কাছ থেকে লোন নেয়। কিন্তু করোনার কারনে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে কিস্তি দিতে ব্যার্থ হয়ে পরে। কিন্তু ব্র্যাক অফিসের টিটো নামের এক মাঠকর্মি তাকে কিস্তি দিতে জোর করে এবং তার খালার কাছে কিস্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে সাবিরিন রহমান কোন উপায় না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে এসে সকল বিষয় জানান।

ঘটনা শোনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্র্যাকের ম্যানাজারের সাথে কথা বলে। সরকারের নির্দেশ অমান্য করে জোর পূর্বক কিস্তি আদায় না করতে শেষ বারের মত সতর্ক করে দেন। পরবর্তিতে এরকম অভিযোগ পেলে আইননানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও ম্যানাজারকে জানান, এছাড়া ব্র্যাকের মত মুজিবনগরে বিভিন্ন এনজিও কর্মিরা গ্রাহকদের কাছ থেকে কিস্তি দিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিয়ে আসছে।

যা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাউকে কিস্তির জন্য জোর করা যাবে না এবং ঋণখেলাপি করা যাবে না উল্লেখ করে গত ২৩ জুন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)।

এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অক্ষমতার কারণে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি অপরিশোধিত থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় ৩০ সেপ্টেম্বর প্রযন্ত কিস্তি বা ঋণকে বকেয়া বা খেলাপি দেখানো যাবে না।

সার্কুলারে আরো বলা হয়, গ্রাহক নিজ ইচ্ছায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করলে নিতে বাধা থাকবে না। কিস্তি পরিশোধের কারণে ঋণের মানের উন্নতি হলে তা করা যাবে। একই সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে কাউকে ঋণ দিতে চায় সেটা দিতে পারবে।

তারপরও কোন নিয়ম নিতি মানছেই না অধিকাংশ এনজিও প্রতিষ্ঠান। প্রজ্ঞাপনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মুজিবনগরের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করা হয়। সেই সঙ্গে কিস্তি পরিশোধে বাধ্য করা হচ্ছে।

কিস্তি আদায়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিস্তি আদায়ে কোন গ্রাহকদের কাছে কোন প্রকার জোর করতে সরকারী নিশেধাঙ্গা আছে। তারপরও কিছু এনজিও সংস্থা কিস্তির জন্য গ্রাহকদের জোর করছে এমন কয়েকটা অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি সকল এনজিও কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। পরবর্তিততে এরকম অভিযোগ আসলে অভিযুক্ত এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।