মেহেপুরে সেই চার সাংবাদিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

মেহেরপুরে সেই চার সাংবাদিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ভিডিও ধারণ করা তারপর ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় চক্রের হোতা মেহেরপুরের চার সাংবাদিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।

গত ১১ এপ্রিল মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এস আই আশরাফ আলী। মামলায় শিল্পতি হাবিবুর রহমান, অ্যাড. কামরুল ইসলামসহ ১৮ জনকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। এবং ১০জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আগামী ৮মে এই মামলার দিন ধার্য রয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- বাংলাভিশন ও নিউজ ২৪ চ্যানেলের মেহেরপুর প্রতিনিধি মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে তুহিন আরন্য, ডিবিসি টেলিভিশনের সাংবাদিক আবু আক্তার করন, দেশ টিভির সাংবাদিক রোকসানা আরা, এশিয়ান টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমান জনি, কথিত সাংবাদিক নাজনিন খান প্রিয়া, ছন্দা খাতুন, আটলান্টিক হোটেল মালিক মতিয়ার রহমান, তার ছেলে মামুন জোয়ার্দার, আব্দুস সালাম, হাসিবুল হক জয়, নেহাল আল মুকিত, শাহাজান আলী, মোছা. রুপা, নুসরাত, বর্ষা, সুমন রহমান বিমান ও বিপাশা। এদের মধ্যে মিজানুর রহমান জনি, নাজনিন খান প্রিয়া, ছন্দা খাতুন, মতিয়ার রহমান, মামুন জোয়ার্দার, হাসিবুল হক জয়, শাহাজান আলী, নেহাল আল মুকিত পুলিশের হাতে আটক হয়ে হাজতবাস করেছেন। বর্তমানের তারা জামিনে আছেন। বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারাসহ ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১),৮(২), ৮(৩), ৮(৪) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্যবলে প্রমানিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধান ও ওই সময় পুলিশের তথ্য থেকে জানা যায়, একটি নারী চক্র গড়ে তুলে মেহেরপুর শহরের আভিজাত শ্রেনীর হোটেল আটলান্টিকার মালিক মতিয়ার রহমান ও তার ছেলে মামুন বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা বা অভিজাত শ্রেনীর মানুষকে সুন্দরী নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তা ভিডিও ধারণ করেন। এবং সেই ভিডিও দিয়ে ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। এই চক্রে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ডজ্জনখানেক সুন্দরী নারী জড়িত ছিলো। তাদের পৃষ্ঠপোষক করতো মেহেরপুরের চার সাংবাদিকও।

জানা গেছে, গত বছরের ২২ নভেম্বর মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মনোয়ার হোসেন নামের এক এনজিও কর্মী সদর থানায় নারী চক্রের প্রধান হোতা প্রিয়া খানকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা দেওয়ার পর পুলিশ বিভাগ তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। তদন্তের অংশ হিসেবে হোটেল আটলান্টিকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ হোটেল মালিক মতিয়ার, তার ছেলে মামুন ও ছন্দা খাতুনকে আটক করে। তার আগে মামলার দিনই পুলিশ শহরের হোটেল বাজার এলাকা থেকে নাজনিন খান প্রিয়াকে আটক করে।

ওই মেহেরপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ছন্দা খাতুন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। জবানবন্দীর ওই কপি মেহেরপুর প্রতিদিনে এসে পৌছালে গত বছরের ১ ডিসেম্বর মেহেরপুর প্রতিদিন জবানবন্দী নিয়ে ফলাও করে তার প্রকাশ করলে মেহেরপুর সহ সারাদেশে ওই সংবাদ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জবানবন্দীতে ছন্দা খাতুন এই চক্রের মুখোশ খুলে দেয়। তার জবানবন্দীতে মেহেরপুরের চার সাংবাদিক, কয়েকজন নারীর কথা উঠে আসে। উঠে আসে কয়েকজন আইনজীবীর কথাও। তবে জবানবন্দীতে দেওয়া তথ্যমতে প্রায় সব আসামি পুলিশের চার্জশিটে অভিযুক্ত হলেও কামরুল ইসলাম ওই আইনজীবীকে চার্জশীট থেকে পুলিশ অব্যহতি দেয়।

ছন্দার জবানবন্দী থেকে ওই সময় জানা যায়, বিগত ২/৩ বছর যাবৎ সাংবাদিক তুহিন অরন্য, আবু আক্তার করন, মিজানুর রহমান জনি, রেকসোনা, মানবতার চোখের সাংবাদিক শাহজাহান মেয়েদের মধ্যে বর্ষা, নুসরাত, প্রিয়া, হোটেল মালিক এর ছেলে মামুন সহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জন মিলে মেহেরপুর আটলান্টিক হোটেলে কৌশলে ভিডিও ধারন করে ও ব্লাকমেইল করে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, বড় চাকুরীজীবীসহ বিভিন্ন লোককে এই ফাঁদে ফেলে চাঁদা আদায় করে চলেছে। মামুন তাকে প্রতি নিয়ত ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করতো। সাংবাদিক রেকসোনা, বর্ষা, প্রিয়া, রুপা, নুসরাত এরা বেশি বাইরে যেয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ভিডিও ধারন করে চাঁদা দাবী করে। পুলিশ এর কথা বললে মতিয়ার তাকে জানায় পুলিশকে প্রতি মাসে টাকা দিয়ে কিনে রেখেছি। পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। মতিয়ার এই ব্যবসা করে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে। আমঝুপির মৃত মোজাফফর হোসেনের ছেলে সাইদ ওই হোটেলে নিয়মিত যাওয়া আসা করে। কিছুদিন আগে তাকে ব্ল্যাক মেইল করেও অনেক টাকা নিয়েছে এই চক্রটি।

এদিকে, হোটেল আটলান্টিকার কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ক্রমশই হোটেলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় হোটেল মালিক মতিয়ার রহমান। বর্তমানে হোটেল আটলান্টিক বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।