মেহেরপুর;এখনো ধান ঘরে তুলতে পারেনি চাষিরা

মেহেরপুরের বিভিন্ন মাঠে অন্তত দশদিন আগে ধান পেঁকে গেলেও ধান কাটা মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারেনি চাষিরা। এখনও অর্ধেক ধান রয়ে গেছে মাঠে। শ্রমিক সংকটের কারনে চাষিরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে শ্রমিক দূর করণ আর স্বল্প মুল্যের ফসল সংগ্রহ করার জন্য সরকার কৃষকদের প্রণোদনা স্বরুপ কম্বাইন্ড হারভেষ্ট মেশিন প্রদান করলেও সেগুলোর দেখা মিলছেনা। ফলে মহা চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এদিকে কালবৈশাখীর তান্ডবে অনেক এলাকার ধান বিনষ্ট হয়েছে।

জানাগেছে জেলার তিনটি উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় আট হাজার ৬২০ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় সাত হাজার ১৫০ হেক্টর এবং মুজিবনগর উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে। জেলার মানুষের খাদ্য চাহিদার বড় অংশ পুরুন করে বোরো মৌসুম। বৈশাখের মধ্যবর্তি সময় থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত চলে ধান কাটা মাড়াই। ধান রোপন ও কর্তনের সময়টা একেবারই কম হওয়ায় দেখা দেয় শ্রমিক সংকট।

শ্রমিক সংকট কাটিয়ে সঠিক সময়ে ফসলন ঘরে তুলতে প্রনোদনা হিসেবে জেলায় ৩২ টি কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিন দেয়া হয় চাষিদের। শর্তারোপ করা হয়, জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় কাজ করতে পারবে। অথচ মেশিনগুলি জেলার কৃষকদের কাজে না লাগিয়ে অন্য জেলায় ভাড়া খাটাচ্ছেন। ফলে সুযোগ বুঝে দ্বিগুন পারিশ্রমিক চেয়ে বসছেন শ্রমিকরা। কালবৈশাখীর তান্ডব ছাড়াও সপ্তাহ জুড়ে মেঘলা আবহাওয়ার কারনে মাঠে ধান রেখে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

ভাটপাড়া গ্রামের বোরো ধান চাষি এরশাদ আলী বলেন, আমি দু’বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি কাটা খরচ দু’হাজার টাকা, বিচালি বাধায় ১২শ’ টাকা, মাড়াই এক হাজার ও পরিবহন খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৬০০ টাকা। রোপণ ও সেচ খরচ এবং সার কীটনাশক বাবদ যে খরচ হয়েছে তা পরিশোধ করে বোরো আবাদ লোকসানে পরিনত হচ্ছে। তবুও নিজের খাদ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিবছর আবাদ করতে হয়। কাটা মাড়াইয়ের সময় শ্রমিক সংকট দেখা দিলে আমাদের লেজে গবরে এক হয়ে যায়। ভর্তুকির হারভেস্ট মেশিন যদি নিজ জেলায় খাটানোর নির্দেশ থকতো তবে বোরো আবাদে কৃষকরা টিকে থাকবে নচেত এ আবাদে আগ্রহ হারাবে।

গাংনীর কুঞ্জনগরের বোরো চাষী মজনুর রহমানের দাবী বর্তমানে দ্বিগুন মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। ধান কেটে বেশ কয়েকদিন মাঠে রেখে এসেছি। আজো ঘরে তুলতে পারিনি। পরিবারের একবছরের খাবার মাঠে পড়ে থাকায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিনগুলি নিজ নিজ এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা থাকলে স্থানীয় কৃষকরা উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরে সময় সময় শ্রমিক সংকট হয়ে পড়ে। শ্রমিকদের দ্বিগুন মজুরি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যায়না কৃষকদের অভিযোগ সত্য,কিন্তু যারা কৃষক তারাই শ্রমিক। কিছু কিছু সময় শ্রমিকরাই সযোগবুঝে অধিক পারিশ্রমিক নিয়ে আবাদীদের বিপদে ফেলেন। প্রণোদনার হারভেস্টি মেশিন কোথায় কাজ করবে তার কোনো দিক নির্দেশনা নেই। তবে আমরা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করার অনুরোধ করতে পারি।