মেহেরপুরের গ্রামঞ্চলে বাল্যবিয়ের ধুম

করোনাকালে মেহেরপুরে বেড়েছে বাল্য বিয়ে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছে অনেকেই। গত ১৭ মার্চ থেকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আগামী ৬ আগষ্ট পর্যন্ত আছে। তবে এই ছুটির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তারের এ সময় বাল্যবিবাহের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে কয়েকগুন।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামীণ পরিবারগুলোতে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা এ সময়টায় দেশে ফিরেছেন। সমাজ বাস্তবতায় প্রবাসে কাজ করা ছেলের ‘পাত্র’ হিসেবে চাহিদা বেশি। আর এই অবরুদ্ধ অবস্থায় বিয়ে দিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন অভিভাবকেরা। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এখন কম হচ্ছে। সেই সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে কেউ কেউ।

সমাজের দরিদ্র অনেক অভিভাবকই এ সময় মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। এ সময়টায় মানুষের চলাফেরা কমে গেছে। তাই খুব বেশি মানুষকে আপ্যায়ন করতে হচ্ছে না। এতে তাদের খরচও কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি মেহেরপুর, গাংনী, মুজিবনগরে প্রশাসনের অভিযানে বাল্য বিয়ে বন্ধ হলেও রাতের আধাঁরে বিয়ে হচ্ছে অনেক।

মেহেরপুর জেলায় মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলে মোট ১৭৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তিন উপজেলায় মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা মিলে ২৭টি মেয়েদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৮ম-১০ম শ্রেনির মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদের শতকরা ২০ ভাগ মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। এই বিয়ের বেশির ভাগই হয়েছে করোনাকালিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে। এছাড়াও কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেনির মেয়েরও বিয়ে হয়েছে। এমন অবস্থায় ছাত্রী সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো।

গাংনী উপজেলার বামন্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম খান বলেন, স্কুল বন্ধ খাকার কারণে আমি তদারকি করতে পারিনি। মাঝে মধ্যে অভিভাবকদের সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখার চেষ্ট করেছি। কিন্তু করোনা পূর্ব সময়ে আমি অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের সাথে বাল্য বিয়ে বন্ধ করার জন্য সভাসমাবেশ করেছি। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের অজান্তেই অনেক শিক্ষার্থাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

মুজিবনগর উপজেলার গোপালনগর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিরুল ইসলাম বলেন, আমি বিগত সময়ে বেশ কয়েকটা বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছি। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তেমন খোঁজ নিতে পারছিনা। তবে ছুটির মধ্যেই স্টুডেন্ট প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কাজ করবো।

মেহেরপুর সদরের শোলমারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব রহমান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অবিভাবকের মনে এক প্রকার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গ্রামীন পরিবেশে এক্ষেত্রে প্রভাব খুব বেশি পড়েছে। রাতের আঁধারেই সল্প পরিসরে কোথাও কোথাও বিয়ের খবর পাচ্ছি। তবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাল্য বিয়ে বন্ধের সকল চেষ্ট ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। বাল্য বিয়ের বিষয়টি আমি আপনার মাধ্যমে শুনলাম। খোঁজ নিয়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, আমার কাছে ইতোমধ্যে যেসব বাল্য বিয়ের অভিযোগ এসেছে সেগুলো বন্ধ করেছি। তারপরও লকডাউনের প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে গ্রামীন অর্থনীতিতে। সেক্ষেত্রে বাল্য বিয়ের একটা প্রবণতা তেরি হচ্ছে। আমরা বাল্য বিয়ে বন্ধ করার বিষয়ে কাজ করে চলেছি।