
সাতক্ষীরার সদর থানা এলাকায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও সদর থানা পুলিশের যৌথ চেকপোস্ট অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের অন্যতম শীর্ষ এজেন্ট মেহেরপুরের মুর্শিদ আলম লিপু ও মুছাইদ আলম ক্যামেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়ার কাজে ব্যবহৃত ১৬টি মোবাইল ফোন ও ৩টি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
এর আগে মেহেরপুরে দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্যাসিনো এজেন্ট লিপু ও তার অস্ত্রের সন্ধানে যৌথবাহিনী লিপুর বাগান বাড়িতে চার দফা অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ জানায়, শুক্রবার (১০ অক্টোবর রাত) সাড়ে ১১ টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ও সদর থানা পুলিশের একটি যৌথ টিম খানপুর থেকে বাইপাসগামী খড়িবিলা মোড় এলাকায় অভিযান চালায়। সন্দেহভাজন একটি অটোরিকশা থামিয়ে তল্লাশি চালালে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের জিনারুল ইসলাম ও রাজিয়া সুলতানা দম্পতির ছেলে মুর্শিদ আলম লিপু এবং মেহেরপুর সদর উপজেলা খন্দকার পাড়ার মাসুদুল আলম ও লুবা ইয়াসমিন দম্পতির ছেলে মুছাঈদ আলম ওরফে ক্যামেল (৩০)।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন জুয়া পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে তারা অনলাইন জুয়া খেলায় উদ্বুদ্ধ করতো এবং জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করতো।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়ার কাজে ব্যবহৃত ১৬টি মোবাইল ফোন ও ৩টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত মুরশিদ আলম লিপুর নামে পূর্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ডিএমপি’র পল্টন থানায় ১৪ নভেম্বর ২০২১ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩(২)/২৪(২)/২৫(২)/৩০(২)/৩১(২)/৩৫(২) ধরাতে দায়েরকৃত এবং এফআইআর নং-৩৭/৫৭৩।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই ঘটনায় নতুন একটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে দেশব্যাপী অনলাইন জুয়া ও ডিজিটাল প্রতারণা দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
উল্লেখ্য, মেহেরপুর প্রতিদিনসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সারা দেশের প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। সে সময় মুর্শিদ আলম লিপু মেহেরপুর থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। তবে বিভিন্ন সময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে ঢাকা সিআইডি তাকে বিভিন্ন ব্যক্তির আইডি কার্ড ব্যবহার করে তোলা সিম কার্ড দিয়ে অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রমাণ পেয়েছে। একই সাথে কখনো তার অবস্থান সাতক্ষীরা, কখনো মাগুড়া আবার কখনো বা ঢাকার বসুন্ধরায় তার অবস্থান সনাক্ত করেছে। তারপরও এতদিন মুরশিদ আলম লিপু ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। মেহেরপুর তথা দেশের শীর্ষ যে ১৯ জন অনলাইন জুয়া এজেন্টের বিরুদ্ধে সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম বিভাগ মানি লন্ডারিং এর অনুসন্ধান করছে তাদের মধ্যেও প্রথম স্থানে রয়েছে এই মুরশিদ আলম লিপু।
এছাড়াও, ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট সিম ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়ার কারবারের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সে সময়েও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মুরশিদ আলম লিপু। এরপরই প্রথমবার ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়া অনলাইন জুয়া এবং অনলাইন জুয়ার এজেন্ট সম্পর্কিত তথ্য দেশবাসীর সামনে আসে।