মেহেরপুরের স্কুলগুলোতে উপস্থিতি ৫০ শতাংশেরও কম

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার এক সপ্তাহ পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো স্কুলমুখী হয়নী ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। বাল্যবিয়ের কারণে এমনটি ঘটেছে ধারণা করছেন শিক্ষকরা। ছাত্রদের মধ্যেও অনেকে জড়িয়েছে আয় মূলক নানা কর্মে। ফলে তাদের স্কুলমুখী করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।
এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত শিক্ষকরা হোম ওয়ার্ক শুরু করেননি। অনেক শিক্ষকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে আবার হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল রবিবার মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রায় ১০টি বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান যাচাই করে এ চিত্র দেখা গেছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ৯০ জন।এর মধ্যে ছাত্র ৫৮ জন এবং ছাত্রী ৩২ জন। কিন্তু গতকাল রবিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ২৪ জন ছাত্র এবং ১৩ জন ছাত্রী উপস্থিত ছিল। দশম শ্রেণীর শিক্ষাথী রয়েছে ৮১ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪৮ জন এবং ছাত্রী ৩৩ জন। কিন্তু উপস্থিত ছিল ১৪ জন ছাত্র এবং ১৯ ছাত্রী। উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশ। গাংনী উপজেলার ধলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রয়েছে ৭৪ জন। এদের মধ্যে উপস্থিত ছিল ৩২ জন। এসএসসি পরিক্ষার্থী রয়েছে ৪৭ জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলো ৪১ জন। সদর উপজেলার বর্শিবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩২ জন এসএসসি পরিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত থাকছে ১৫ থেকে ১৬ জন এবং দশম শ্রেণীর ৫২ জনের বিপরীতে উপস্থিত থাকছে ২২ থকে ২৩ জন বলে জানান একজন সহকারী শিক্ষক।
মুজিবনগর আম্রকানন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ১১৫ জন। সেখানে উপস্থিত হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ জন। এদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার ছাত্রীদের বেশি। গাংনীর রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, অনেক মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারনে এখন উপস্থিতি কম। কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা শিক্ষকরা হোম ওয়ার্ক শুরু করবো।
গাংনীর হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বিদ্যালয়ে আগের তুলনায় উপস্থিতি ঠিক আছে। তার পরেও দির্ঘদিন ছুটির পর স্কুল খোলা হয়েছে। অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। যার ফলে উপস্থিতিটা একটু কম। তবুও আমার বিদ্যালয়ে উপস্থিতি সন্তুষ্টজনক দাবী করেন।
অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা স্বীকার করে জানান, দির্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ থাকায় মেয়েদের বাল্যবিয়ে ও ছেলেরা আয়মূলক বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে তারা বিদ্যালয় মূখী হতে পারছে না। ৫০ শতাংশের উপরে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
গাংনী উপজেলা মাধমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন, যারা অনুপস্থিত রয়েছে তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি। দির্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে অনেক শিক্ষার্থী তাদের পরিবারের হাল ধরতে কর্ম বেছে নিয়েছ। অনেকেই টাকার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কাজ করছে। তারা বিদ্যালয় মুখি হচ্ছেনা। অনেক মেয়েদের অভিভাবক বিয়ে দিয়েছেন। তার পরেও আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তাগাদা দিচ্ছি,শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে খোজ নিতে। তবে দিন দিন উপস্থিতির সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে আসছে কিনা, তাদের জ্বরসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে কিনা সব বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিন মাউশিতে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে উপস্থিতি যাতে বাড়ে সে বিষয়গুলোর উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমাদের গাংনী ব্যুরো আক্তারুজ্জামান, গাংনী প্রতিনিধি তোফায়েল হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সিরাজুদ্দোজা পাভেল, ওসমান গণি নয়ন, মুজিবনগর প্রতিনিধি শাকিল রেজা ও কাথুলী প্রতিনিধি পলাশ আহম্মেদ।