মেহেরপুরে অনুমোদনহীন হাসপাতাল প্যাথলজির ছড়াছড়ি

মেহেরপুরে অনুমোদনহীন হাসপাতাল প্যাথলজির ছড়াছড়ি

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে ‘আল-আকসা নার্সিং হোম অ্যান্ড ল্যাব ও গাংনীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে হাসিনা ডায়াগনিস্ট সেন্টার’সহ অনেক ল্যাব ও বেসরকারি হাসপাতাল সিভিল সার্জন অফিসের তালিকাতে নেই।

তালিকাভূক্ত ল্যাব ও হাসপাতালের খবর স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ তেমন একটা খবর রাখে না। জেলাজুড়ে অনুমোদন ছাড়া জমজমাট অবস্থা হাসপাতাল ও প্যাথলজি ব্যবসায়। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবসার নিয়ন্ত্রক চিকিৎসক ও জনপ্রতিনিধিরা। দিন দিন জমজমাট হয়ে উঠছে মেহেরপুরে স্বাস্থ্যখাতের এই ব্যবসা। জেলার ৮০ ভাগ ক্লিনিকই বৈধ লাইসেন্সসহ শর্তাবলি পূরণ না করেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

এসব ক্লিনিকের নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্সসহ আসবাবপত্র। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে নির্মিত হচ্ছে নার্সিং ইন্সটিটিউট। পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে বেসরকারি ক্লিনিকের ছড়াছড়ি। হাসপাতালের উত্তর দিকের অংশের নাম ছিল ওয়াবদাপাড়া। এখন ‘ক্লিনিক পাড়া’ নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই ক্লিনিক পাড়ায় প্রায় কুড়িটি ক্লিনিক অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এসব ক্লিনিকের পোষ্য দালালদের দৌরাত্মে সরকারি হাসপাতালে কোনো রোগী যাওয়ার উপায় নেই বলে জানালেন ভুক্তভোগীরা। আবার ক্লিনিকগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চিকিৎসকদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে এন্তার অভিযোগ। সরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক টাকা খরচ জেনেও রোগীরা ক্লিনিকমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে জড়িত। সরকারি হাসপাতালের কোন কোন চিকিৎসক ও সেবিকারা বাধ্য করছে রোগীদের ক্লিনিকমুখী হতে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবে জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজি ল্যাব রয়েছে ১০৫টি। এরমধ্যে ৬৯টি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। তালিকার বাইরে ছোট-বড়সহ আরও ডজন দুই হাসপাতাল আছে। তালিকাভূক্ত প্যাথলজি ল্যাব রয়েছে ৩৬টি। সিভিল সার্জন অফিসের তালিকাভুক্ত ৬৯টি হাসপাতালের মধ্যে ৫৮টি হাসপাতালের লাইসেন্স নাই।

১০ বেডের আবেদন নিয়ে হাসপাতাল ব্যবসা শুরু করলেও অনেক হাসপাতালের বেড সংখ্যা বেড়ে ৫০ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের বর্ধিত বেড অনুপাতে জনবল নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ও লো প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় অনুমোদনহীন হাসপাতাল প্যাথলজি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আলোচনা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দেয়া ১০ নির্দেশনা চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ এই নির্দেশনার আগে গাংনীর রাজা ক্লিনিকে অপারেশনের কুড়ি বছর পর বাচেনা খাতুন নামের এক রোগির পেট থেকে সার্জারি কাঁচি বের করা হয়েছে। ঘটনায় মামলা হলে ক্লিনিক মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আব্দস সালামের জেলা শহরের মেহেরপুর দারুস সালাম ক্লিনিকে অপারেশন টেবিলে এক রোগির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মামলা হলে আদালত থেকে জামিনে আছেন ডা. সালাম। গত জানুয়ারি মাসে শহরের মল্লিক পাড়ায় হাসপাতালের আরেক অবসরপ্রাপ্ত আরএমও ডা. রমেশ ক্লিনিকে রোগির মৃত্যুতে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আবার ওই ক্লিনিকের নিজস্ব সেবিকা স্বর্ণালীর এপেন্ডিসাইটিস অপারেশনকালে মৃত্যু হলে ২০ লাখ টাকায় রফা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ গাংনীতে গাংনী উপজেলায় হাসিনা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগির মৃত্য হলে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা ও হাসপাতালের মালিক হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ১০ দফা নির্দেশনা চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসক এক রোগির অনেকগুলো টেস্ট দিলে দালালের খপ্পরে পড়ে অক্ষরজ্ঞানহীন ওই রোগি মো. ইসাহক আলী। দালাল পাশের এক প্যাথলজিতে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বিল ধরিয়ে দেয় ১৭শ টাকা। আর্থিক অসঙ্গতি জানিয়ে রোগি কেঁদে কেটে একাকার হলে শেষতক এক হাজার টাকা বেরিয়ে আসার সময় ক্ষিস্তি খেউড় শুরু করেন ইসাহক আলী।

মেহেরপুরের সিভিল সার্জন মহী উদ্দিন আহমেদ জানান- প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক, প্যাথলজি পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।