দলীয় কোন্দলের জের ধরে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপিতে ইউনিয়ন বিএনপি’র সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, বিএনপি নেতা কাজী মিজান মেনন, মনোয়ারুল হোসেন চঞ্চল, আজিমুল বারি লাভলুসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় এ হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের অভিযোগ, আমঝুপি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং তার ভাই সফিকুল ইসলাম-এর নেতৃত্বে তাদের সমর্থকরা সম্মেলনস্থলে হামলা চালান। তারা সম্মেলনে আসা নেতাকর্মীদের বাধা দিচ্ছিলেন, আর প্রতিরোধ করতে গেলেই হামলার শিকার হতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই সংঘর্ষের একাধিক পর্ব চলে। লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা জানাচ্ছেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং সম্মেলন বানচালের উদ্দেশ্যেই হামলা হয়েছে।
আমঝুপি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আজিমুল বারি লাভলু বলেন, ইউনিয়ন সম্মেলনকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে সাইফুল ইসলামের লোকজনের নানা হুমকি শোনা যাচ্ছিল। প্রথমে আমঝুিপি হাইস্কুল মাঠ, তার পরে নিলকুঠি চত্বরে সম্মেলন করার কথা ছিলো। পরে তাদের বাঁধার কারণে উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক সকাল থেকে নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থলে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে সাইফুল ইসলাম ও তার ভাই শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তাদের কর্মী সমর্থকরা নেতাকর্মীদের বাঁধা প্রদান করে। বাঁধা প্রতিরোধ করতে গেলে তারা লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও তারা তাদেরও তোয়াক্কা না করে দফায় দফায় হামলা শুরু করে। পরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. কামরুল হাসান ভাই গাড়ি বহর নিয়ে সম্মেলন যেতে গেলে গাড়ি ভাংচুর করে এবং কামরুল ভাইয়ের উপর হামলা করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তবে আইন-শৃঙ্খলবা বাহিনীর সামনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও তাদের নিরবতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
অভিযুক্ত উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন আমরা যারা লড়াই সংগ্রাম করে বিএনপি’র জন্য জীবন বাজি রেখেছি। সেই সকল ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিডদের নিয়ে কমিটি করা হচ্ছে। এ কারণে ওই নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ আহমেদ বলেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুনের কর্মী সমর্থকরা দলীয় প্রতিটি কাজে বাঁধা প্রদান করে যাচ্ছে। সকল বাঁধা পেরিয়ে আমরা দলীয় গঠণতন্ত্র মোতাবেক ইউনিয়নগুলোতে কাউন্সিল করছি। আমঝুপিতেও তার সমর্থক সাইফুল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের সদস্য সচিবসহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে জখম করেছে। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রে জানিয়েছি।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “সংঘর্ষের পরপরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার ২৩ মে বিকালে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপি’র দ্বি-বার্ষীক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থানীয় উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে হাফিজুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় বিজয়ী হয়েছেন। সভাপতি পদে জহির হোসেন চঞ্চল, মোস্তাক রাজা, স্বপন আহমেদ প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। সম্মেলনে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন, সদস্য সচিব অ্যাড. কামরুল হাসান , যুগ্ম আহবায়ক ফয়েজ মহাম্মদ, সদস্য ইলিয়াস হোসেন, আলমগীর খান সাতু, ওমর ফারুক লিটন অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন।