মেহেরপুরে কমছে আবাদি জমি

এম এফ রুপক:
মেহেরপুরে আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। অপরিকল্পিত পুকুর খনন, ইট ভাটায় মাটি বিক্রি, সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির ব্যবহারে কমেছে এই আবাদি জমি। মেহেরপুর জেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালেই কমেছে ৪ ভাগ জমির পরিমাণ। তবে গত ২০২০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারনা করছে পরিসংখ্যান অফিস।

মেহেরপুর জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৬শ ৭৩ হেক্টর। বর্তমানে রয়েছে ৫৭ হাজার ২শ ৮৬ হেক্টর। গত এক বছরে কমেছে ২ হাজার ৩শ ৮৭ হেক্টর। তবে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ইট ভাটায় মাটি বিক্রিকে। মেহেরপুরে ছোট বড় মিলে ১১৪ টি ইট ভাটা রয়েছে। যেগুলোর মাটি সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন জমি থেকে। মাটি সংকটের কারণে চড়া দামে চাষিদের কাছ থেকে আবাদি জমির মাটি কিনে নিচ্ছে ভাটামালিকরা। বিঘা প্রতি ১লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দিচ্ছে তারা।

মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের কাউসার গোভীপুর-হরিরামপুর সড়কের পাশে ৩ বিঘা আবাদি জমির মাটি ৩ লাখ টাকায় ভাটায় বিক্রি করেছেন। বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে প্রায় দশ বিঘা জমির মাটি ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ইট ভাটায় বিক্রি করছেন জমির মালিক বাড়িবাকা গ্রামের বাবু হাজী। এছাড়াও বাড়িবাকা গ্রামে বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি একই কায়দায় মাটি বিক্রি করেছেন ২ বিঘা জমির। সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের কাজল নামের এক ব্যক্তি ২ বিঘা উছতি ভুট্টার ক্ষেত কেটে সেই জমির মাটি বিক্রি করেছে ইট ভাটায়। মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর-তারানগর মাঠে ৩৩ বিঘা জমির মাটি বিক্রি হয়েছে ৩৩ লাখ টাকায়। গাংনী উপজেলায় এর পরিমাণ আরও বেশি। এই উপজেলার বাবুরপাড়া, জোড়পুকুরিয়ায় চলছে মাটি কাটার মহোৎসব।

কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই কাটা হচ্ছে মাটি। ফলে পাশ^বর্তী ফসলি জমিগুলো পড়ছে হুমকির মুখে।

পাশ^বর্তী বেশ কয়েকজন জমির মালিক জানান, প্রত্যেক দিন ৮০ থেকে ১০০ গাড়ি মাটি উত্তোলন করে সেই মাটি ট্রাক্টর দিয়ে বহন করে নেওয়া হচ্ছে আশেপাশের বিভিন্ন ভাটায়। মাটি কাটার কারণে আমাদের ফসলি জমিগুলো বিনষ্ট হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, জমির পরিমাণ কমে যাওয়াটা উদ্বেগজনক। মেহেরপুর যেহেতু কৃষি নির্ভর এলাকা, সেহেতু কৃষিকে বাচাঁতে হলে অবৈধভাবে জমির চরিত্র বদল করা বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মুনুসর আলম খান বলেন, কৃষি জমি কমে যাওয়াটা ভাবনার বিষয়। সে ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছি। যেহেতু কৃষি জমি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ইট ভাটায় মাটি বিক্রি। সে দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকার ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক তৈরির ব্যাপারে ভাবছে। এই ব্লক সিস্টেম চালু হলে ইটের ব্যবহার কমবে, এতে মাটির ব্যবহারও কমবে।