মেহেরপুরে চলছে তীব্র দাবদাহ। দীর্ঘ ৮ বছরের মধ্যে সর্ব্বোচ্ছ তাপমাত্রা

ভ্যাপসা গরম ও তাঁতানো রোদে দমবন্ধ অবস্থা এখন মেহেরপুরের জনজীবন ও প্রকৃতিতে। সূর্যের প্রচন্ড তাপ ও গরমে শুধু জনজীবন নয় বিপর্যস্থ প্রাণীকুলও। মাঠের কর্মজীবি মানুষ কাজ ফেলে পানি আর ছায়ার জন্য হাসফাঁস করছে।

ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই সকলের মাঝেই ত্রাহি অবস্থা। হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আগামী ৩ থেকে ৪ দিন একই অবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে বিগত ৮ বছরে এটাই সর্ব্বোচ্ছ তাপমাত্র মেহেরপুর জেলায়।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামাদুল ইসলাম জানান, মেহেরপুর জেলায় গত তিন দিন ধরে ম্যাক্সিমাম তাপমাত্র ৩৯-৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়। মেহেরপুর জেলায়  সোমবার বেলা ৩ টার সময় তাপমাত্র ছিল ৪১.০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সকাল ১২ টার সময় তাপমাত্র ছিল ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রাও বেড়েছে। তিনি বলেছেন দিনের এবং রাতের তাপমাত্র কিছুটা বাড়তে পারে। বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত এই তাপমাত্র অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত সামাদুল ইসলাম আরো জানান, ২০১৪ সালের ২১ মে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের তাপমাত্রা হয়েছিল ৪২.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

তারপর থেকে এই তাপমাত্রা দেখা দেয়নি। দীর্ঘ ৮ বছর পর এই প্রথম মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে দাড়ালো।

গত শনিবার রবি ও সোমবার দিনভর সূর্য যেন অগ্নি বৃষ্টি ঢেলেছে। ফলে ভীষণ গরমে এখানকার জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। হাঁসফাঁস দশা প্রাণীকূলেরও।

যারা বোরো ধান ঝাড়া ও রোদে শুকানোর কাজ করছেন গরমে যেন প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের। শ্রমজীবী মানুষজনও দমবন্ধ করা গরমে পড়েন অপরিসীম কষ্টের মধ্যে। জানা যায়, চৈত্র শুরুর পর থেকে মেহেরপুরে গরমের এমন দাপট চলছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্র বলছে, দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি দাবদাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু দাবদাহ।

আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র দাবদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর রোজার মধ্যে মেহেরপুরে তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে।

সোমবার সকাল থেকেই জেলায় গরমের আবহ ছিল। খুব সকালের দিকেও ভালো রকমের গরম অনুভূত হয়। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তেজ বাড়তে থাকে। দিনভর দাপট দেখাতে থাকে জ্যৈষ্ঠের তেজি সূর্য।

দুপুরের দিকে তাপের দহন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে দুপুরের দিকে শহরে মানুষজনের চলাফেরা বেশ খানিকটা কমে আসে। এদিকে, বিকালের দিকে সূর্যের আগুন ঢালা কমে এলেও গরম অব্যাহত ছিল।

এদিকে, গরমের দাপট চরমে ওঠায় মৌসুমি ফলের দোকানগুলো মানুষের ভিড় জমে। গরম থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কচি ডাবের পানি পান করতে দেখা যায় পথ চলতি মানুষকে। এছাড়া তরমুজ ফলও বেশ বিক্রি হচ্ছে। শহরের রাস্তার পাশের শরবতের দোকানগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের ভিড়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ডাক্তার মশিউর রহমান মোল্ল্যা বলেছেন, প্রচন্ড গরমে আদর্তা ২৬ হওয়ার কারণে মানুষের শরীর থেকে জলীয় বাস্প পরিবেশে চলে যাবে।

যার কারণে মানুষের শরীরের পানি শুন্যতা ও রক্তে লবণের পরিমান বাড়বে। ফলে মানুষের পানি শুন্যতা দেখা দেবে। হিট স্ট্রোক ও মৃত্যু থেকে রেহায় পেতে এই সময়ে মানুষকে ঠান্ডা স্থানে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

এই সময়ে অতিরিক্ত পানি, স্যালাইনের পানি ও ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন। এগুলো পান না করলে স্ট্রোকের পূর্বাবস্থা হিট স্ট্রেচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।