
বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে চালু হলো মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ফলক উন্মোচন এবং নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক জমকালো অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য মনির হায়দার।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী, সিভিল সার্জন ডা. এ. কে. এম. আবু সাঈদ এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহরিয়া শায়লা জাহান।
উদ্বোধনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মেহেরপুর থেকে বাংলাদেশের সূচনা। তাই সর্বক্ষেত্রে মেহেরপুরকে এক নম্বর হতে হবে। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও মেহেরপুরের মানুষ পাবে উন্নত সেবা। দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল ও চিকিৎসক সংকট কাটিয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালকে শুধু চাকচিক্যময় ভবন নয়, বরং চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চিকিৎসকদের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আটতলা ভবনটি কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যা হলেও সরকারিভাবে জনবল বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১০০ শয্যার অনুপাতে। সেখানে ৪২ জন চিকিৎসক বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২৩ জন। ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদ এখনো শূন্য। ফলে দীর্ঘদিনের চিকিৎসক সংকট কাটেনি।
এর আগে ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অসম্পূর্ণ ভবনটির উদ্বোধন করেছিলেন। এরও আগে এই ভবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট সার্ভিস ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন ফরহাদ হোসেন। তবে তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এবার পুনরায় উদ্বোধনের পর কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে।
তবে নতুন ভবনের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যেই শঙ্কা রয়েছে। তৃতীয় তলা থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত সিঁড়ি প্লাইউড দিয়ে বন্ধ করা হলেও নিচতলার লিফট সচল রয়েছে। ফলে যে কেউ সহজেই উপরে যেতে পারছে। এতে যন্ত্রপাতি চুরি, মাদকাসক্তদের আড্ডা কিংবা অপরাধীদের আস্তানা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ জরুরি।
উদ্বোধনের পর আপাতত ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় স্বাস্থ্যসেবা চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে অনুষ্ঠানে। তবে উপরের তলাগুলো এখনও ব্যবহারযোগ্য নয়। সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করা হবে বলে জানিয়ে অতি দ্রুত এর সঙ্গে জনবলের ঘাটতিও পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও তিনজন মেডিকেল অফিসারের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অতি দ্রুত তারা কর্মস্থলে যোগ দেবেন। বাকি জনবল সংকটও দ্রুততম সময়ে পূরণ করা হবে।