মেহেরপুরে জ্বরসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

মেহেরপুরে জ্বরসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই জ্বর-সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় অনেকের জায়গা হয়েছে হাসপাতালের বেডসহ প্রবেশ পথে, মেঝেতে এমনকি সিঁড়ির ওপরে।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার বলেন, চলতি আগস্ট মাসের ১ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত সর্দি কাশি জ¦র নিয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৯০৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫৬ জন, নারী ২৮৫ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৩৬২ জন।

এছাড়া গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ১ হাজারের বেশি নারী ও শিশু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ায় বৃদ্ধ নারী ও শিশুরা সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এক সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

অভিভাবকেরা বলছেন, জ¦র-সর্দি কাসিতে আক্রান্ত শিশুদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়ার পর, হাসপাতালে ভর্তি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আবার হাসপাতালে এসে জায়গা পাওয়াটাও কঠিন যাচ্ছে। তাই মেঝেতে কিংবা সিঁড়ির ওপরে যেখানে জায়গা হচ্ছে সেখানে থেকেই ভালো চিকিৎসা পাবার আসায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল বুধবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, শয্যার থেকে বেশি রোগী থাকায় বেশ কয়েকজনকে রাখা হয়েছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রবেশ পথের মেঝেতে, কেউবা সিঁড়ির ওপরে, বাথরুমের প্রবেশ পথে।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার ঝাঁঝাঁ গ্রামের ফাকের আলী, নওদাপাড়া গ্রামের জরিনা খাতুন, বুড়িপোতা গ্রামের সুন্দরী খাতুনসহ প্রায় শতাধিক রোগীকে হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে ও ডেঙ্গু ওয়ার্ডের পথে শুয়ে রয়েছেন। সুন্দরী খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে ভালই ছিল হঠাৎ করে প্রচন্ড জ¦র ও মাথা ব্যাথা হলো। তারপরে এই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমাদের মত কয়েক শ রোগী এভাবেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

চিকিৎসা নিতে আসা ১ বছর বয়সী শিশু হাদিছা খাতুনের মা রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ের ঠান্ডা লাগা এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল। গ্রামের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেছি, তবে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আমি গতকাল হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছি। এখানকার ডাক্তাররা বলছে কয়েকদিন থাকতে হবে।’

মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামের মকছেদ আলী জানালেন, ‘আমার ছেলে আজ দুদিন ধরে জ¦র সর্দি কাসিতে ভুগছে। আজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেড না পেয়ে ফ্লোরেই সুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। কষ্ট হলেও ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আসায় এখানে ভর্তি হয়েছি।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর এম ও ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান, আবহাওয়ার কারণে বাচ্চাদের গরম কাপড় পরালে অনেক সময় ঘেমে গিয়ে ঘাম শরীরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার রাতের বেলায় ফ্যান চালিয়ে রাখলে এক সময় ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। এতে শিশুরা বেশি ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ বাচ্চাদের অভিভাবক মায়েদের একটু বেশি সর্তক হতে হবে।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আর এমও ডা. মোখলেচুর রহমান জানান, বতর্মানে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যারা ভর্তি আছেন তাদের সেবার কোনো কমতি হচ্ছেনা। এখানে সিটে সাংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে বা সিঁড়ির নিচে রাখতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের বেডের তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি আছে। তবে, ওষধের কোনো কমতি নেই, পাশাপাশি ডাক্তার থেকে নার্স সকলেই সেবা প্রত্যাশীদের প্রতি আন্তরিক।