মেহেরপুরে তর সইছে না ব্যবসায়ীদের; রাতের আঁধারে ভাঙছে আম

মেহেরপুরে তর সইছে না ব্যবসায়ীদের; রাতের আঁধারে ভাঙছে আম

তর সইছে না আম ব্যবসায়ীদের। ১৫ মে থেকে গুটি ও বোম্বায় আম ভাঙানোর তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তার তিন দিন আগে থেকেই অতিমুনাফার লোভে গুটি ও বোম্বায় আম ভেঙে জেলার বাইরে রপ্তানিতে ব্যস্ত চাষীরা। আর এ কাজটি করা হচ্ছে প্রতিদিন রাতের আঁধারে।

গতকাল শনিবার রাতে মুজিবনগর উপজেলার পুরন্দরপুর ও কোমরপুর এবং শুক্রবার রাতে মুজিবনগরের ভবেরপাড়া থেকে বাগান থেকে আম ভেঙে ট্রাক লোড করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

মেহেরপুরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনুকুল আবহাওয়া থাকাতে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে ঝড় ও বৈরি আবহাওয়া না থাকায় প্রতিটি আমগাছ আমের ভারে নুয়ে পড়েছে। ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাগান মালিকরা কীটনাশক মুক্ত আম উৎপাদন করেছে। এই আম আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রির পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হওয়ার কথা। কিন্তু অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের দৌরাত্ম্যে মেহেরপুরের বিভিন্ন আম বাগান হতে গতকাল শনিবার (১৩মে তারিখ) থেকে আটি ও বোম্বাই আমের পাশাপাশি অপরিপক্ক হিমসাগর আম পেড়ে রাতের আধারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে মেহেরপুরের হিমসাগর আমের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি বাজার হুমকিতে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

মুজিবনগর ভবেরপাড়ার আম বাগান ব্যবসায়ী সিদ্দিক বলেন, ‘জেলা প্রশাসন আম পাড়ার জন্য ১৫ মে থেকে জাত ভেদে বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করলেও মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন ১২ মে থেকে আটি ও বোম্বাই আম পাড়ার অনুমতি দিয়েছে।’ তবে হিমসাগর আম পাড়ার অনুমতি নেই বলে জানান বাগান ব্যবসায়ী সিদ্দিক।

তবে, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস এ বিষয়ে জোর দিয়ে কিছু বলতে চাননি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী মেহেরপুর জেলায় এবছর আম সংগ্রহের সময়সুচি আটি ও বোম্বাই জাতের ১৫ মে, গোপালভোগ ১৮ মে, হিমসগার ২৫ মে, ল্যাংড়া-২৮ মে, আম্রপালি ৫জুন, মল্লিকা ১০ জুন, ফজলি ২০ জুন এবং বিশ্বনাথ,আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমের মুকুল আসা থেকে শুরু করে আম বাজারজাত করা পর্যন্ত সকল প্রকার পরামর্শ দিচ্ছে বাগান মালিকদের। মেহেরপুর জেলায় চলতি বছরে ২ হাজার ৩৪০ হেক্টর আম বাগানে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে হিমসাগর আমের বাগান রয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে।

এবছর মেহেরপুর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে ৪০ মেট্রিকটন হিমসাগর আম রপ্তানি ও প্রায় ২০০ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলো মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু অতি মুনাফালোভী ব্যাপারী চক্রের দৌরাত্ম্যে ও জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়াতে আজ মেহেরপুরের বিখ্যাত আমের সুনাম ক্ষুন্নের পাশাপাশি আগামীতে রপ্তানি বাজার হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে।