মেহেরপুরে তামাক চাষীদের নাটকীয় অনশনের নেপথ্যে তামাক কোম্পানি

মেহেরপুরে দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতির অনশনের নেপথ্যে আবুল খায়ের টোব্যাকো কেম্পানী। তামাক কোম্পানী নিজেদের অনুগত কিছু চাষীদের নিয়ে ব্যানার তৈরি করে এ সকল অনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন তামাক নিয়ন্ত্রণে বদ্ধ পরিকর ঠিক সেরকমই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে এ কর্মসূচি করছে তামাক কোম্পানি।

গতকাল মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) সকাল সাড়ে দশটায় মেহেরপুর প্রেস ক্লাবের সামনে এরকমই একটি অনশনের আয়োজন করা হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, কৌশলে অনশন নাটক সাজিয়ে তামাক চাষের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনশনের ব্যানার ফেস্টুন ও ডেকোরেশন করে দিয়েছে আবুল খায়ের টোব্যাকো। এই নাটকীয় অনশন ভঙ্গ করতে ব্যবহার করা হয়েছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। যারা তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সেভাবে অবগত না হয়েই কোম্পানির ফাঁদে পড়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

অনশন শুরুর আগ থেকে শেষ পর্যন্ত আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সরব উপস্থিতি ছিলো। দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক সেন্টু একজন তামাক ব্যবসায়ী; এছাড়াও অনশনরত প্রায় সকলেই আবুল খায়ের টোব্যাকোর নিবন্ধিত তামাক চাষী।

আবুল খায়ের টোব্যাকোর ফিল্ড অফিসার গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের মহিবুল ইসলাম অনশনস্থলে চাষী সেজে বসে তদারকি করছিলেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত চাষীদের। আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির প্রতিনিধি ও তামাক চাষীদের অনুরোধে আনশনরত চাষীদের অনশন ভঙ্গ করাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ খালেক এবং গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী সেখানে গিয়েছিলেন।

এ সময় কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেওয়া জুস ও পানি দিয়ে চাষীদের অনশন ভঙ্গ করান তাঁরা। শেষে চাষীদের সকলের জন্য প্যাকেট খাবার ও পানি সরবরাহও করা হয়েছে এ কোম্পানি কর্তৃক।

তামাক চাষীদের অনশন ভাঙ্গানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক জানান, আবুল খায়ের টোব্যাকোর লোকজন ও চাষীরাও ফোন দিয়েছিলো তাই গিয়েছিলাম।

ব্যানারে আয়োজক সংগঠন হিসেবে অনশনরত দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতির মেহেরপুর সভাপতি আলমগীর হোসেন সেন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের দবিগুলো কী কী? প্রশ্নের জবাবে তিনি আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির দেওয়া লিফলেট দেখে দাবির কথাগুলো বলেন। তাদের কারও কোন কোম্পানির কার্ড নেই তাই তারা অনশন করছেন বলেও দাবি করেন তিনি। অথচ তাদের বেশিরভাগই আবুল খয়ের টোব্যাকো কোম্পানির নিবন্ধিত চাষী।

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক সেন্টু, বলেন বিদেশী কোম্পানি বিএটিবি আমাদের তামাক কিনে না তাই আমরা সাধারণ তামাক চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। দেশীয় তামাক কোম্পানি রক্ষা করার জন্য দেশীয় কোম্পানির উপর কর কমাতে হবে। এবং বিদেশী তামাক কোম্পানির উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার দাবি তাদের।

তামাক চাষে নিরুৎসাহিত এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যখন নানা কাজ করে চলেজে এর মধ্যে চাষীদের নিয়ে এমন একটি অনশন কেন ? এমন প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর না দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে সটকে পড়েন কোম্পানির বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি।