মেহেরপুরে দেড় হাজার বিঘা জমি ইটভাটার পেটে

প্রশাসনের উদাসীনতায় মেহেরপুর জেলায় প্রায় দেড় হাজার বিঘা তিন ফসলি জমি এখন ইটভাটার পেটে। ফসলি জমিতে যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠায়, জেলায় কমেছে ফসলের উৎপাদন। একদিকে ফসলের উৎপাদন কমেছে, অপরদিকে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর জন্য পরিবেশের মারাত্বক ধ্বস নেমেছে। আর সেই সাথে উজাড় হচ্ছে জেলার বনাঞ্চল।

ইটভাটা মালিকরা জানান, একটি ইটভাটাতে এক সিজিনে প্রায় এক লাখ টন কাঠ পোড়ানো হয়ে থাকে। ইটভাটাগুলোতে জড়ো করা হয়েছে শত শত লক্ষ মন কাঠ।

প্রশানের নাকের ডগায় ইটভাটাগুলোতে কাঠ জড়ো করলেও নিরবে রয়েছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। প্রশাসনিক পদক্ষেপ না থাকায় ইটভাটা মালিকরা আইনের তোয়াক্কা করছেন না। ফলে বিপর্যয়ের মুখে জেলার পরিবেশ। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগকে ম্যানেজ করেই প্রতিবছরের ন্যায় এবারো জেলায় ১০৫ টি ইটভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ।
মেহেরপুর জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি ইটভাটা জানালেন পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক (ডিডি) আতাউর রহমান।

তবে, মেহেরপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসুল জানিয়েছেন, মেহেরপুর সদর উপজেলার ইটভাটাগুলোর ৭০ ভাগই এখন পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা। তিনি বলেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমান যে আইন বিদ্দমান রয়েছে। সেখানে সারা বাংলাদেশের একটি স্থানেও ইটভাটা গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আমরা ইটভাটা মালিক সমিতি পরিবেশ আইন কিছুটা শিথীল করে ইটভাটা মালিকদের ছাড়পত্র দিতে অনুরোধ জানিয়েছি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো ইটভাটার সামনে লাখ লাখ মন কাঠ জড়ো করে ইট পুড়ানো হচ্ছে।

জেলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় প্রতি মৌসুমে এক থেকে দেড় কোটি মণের উপরে কাঠ পোড়ানো হয়। দেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ ও স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত কাঠ এসব ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটার চাহিদা মেটানোর জন্য অবাধে গাছপালা কাটা হয়। এর নির্গত ধোঁয়া যুক্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে অপরদিকে গাছপালা উজাড় হওয়ায় পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। শুধু পরিবেশ নয়, মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মাঠের উঠতি ফসল। কারন জেলার তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোতেই তৈরী করেছেন ইটভাটা। ইটভাটায় কাঠ পুড়ানো এখনই বন্ধ করা না গেলে সবাইকে দিতে হবে বড় ধরনের খেসারত।

গাংনী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এমকে রেজা বলছেন, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে। কার্বন-ডাই অক্সাইড ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হয়।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ডিডি) স্বপন কুমার খা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন যাতে না হয় সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার বলেছেন। তারপরেও প্রতি বছরই জেলাতে ইটভাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরি করা যাবে না ফিক্সড চিমনি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবে না। কিন্তু মেহেরপুর জেলায় এ আইনের কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি। অথচ, জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন বলে দফতর আছে।

গাংনীর ইটভাটা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কাঠ পোড়াচ্ছি। মাঝে মাঝে লোক দেখানো কিছু মোবাইল কোর্ট করা হবে। যেটা আমরা তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। নাম না প্রকাশ করার শর্তে হিজলবাড়িয়া মালশাদহ রোডের কয়েজন ভাটা মালিক জানান, ভাই এসব বলে কি হবে। সঠিক কথাটা বললেই কালকে আমার ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে।

পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়া উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, মেহেরপুর জেলায় দুইটা জিকজাগ ভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র থাকলেও হালনাগাদ আছে মাত্র একটির। বর্তমানে ১২০ ফিট চিমনিরও কোন অনুমোদন নেই। ইটভাটাগুলোতে কাঠপোড়ার বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আল্পদিনের মধ্যেই আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা শুরু করবো।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খাঁন বলেন, আমরা কাঠ পুড়ানোর ব্যাপারে ভাটা মালিকদের কঠোর বার্তা দিয়েছি। ইট ভাটাতে শুরুতে কিছু কাঠ পোঁড়ানো লাগে। এছাড়া যেসব ভাটাতে কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।