মেহেরপুরে নকল পেঁয়াজের বীজে সয়লাব মাঠ

এম এফ রুপক

মেহেরপুরে সুখসাগর নামের নকল পেঁয়াজের জাতে সয়লাব কয়েকটি ইউনিয়ন মাঠ। নকল জাতের পেঁয়াজ চাষ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার কয়েক’শ চাষী। সদর উপজেলার আমদহ ও কুতুবপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক’শ একর জমিতে দেখা দিয়েছে নকল জাত। গাছ বড় হলেও কাক্সিক্ষত কোন ফলন নেই তাতে।

সদর উপজেলার রুদ্রনগর গ্রামের রবজেল নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে এই নকল বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ চাষীদের। এমতাবস্থায় নকল পেঁয়াজের চারা তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এতে একদিকে যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছে এলাকার চাষীরা অন্যদিকে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছে জেলা কৃষি বিভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও নকল সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের গাছে তেমন কোন ফলন নেই। অন্য জমিতে ইতোমধ্যে ৪০-৮০ গ্রাম ওজনের পেঁয়াজের ফলন হলেও শিকড় ছাড়া কোন কিছুই নেই নকল জাতে।

সদর উপজেলার কোলা গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এক নাগাড়ে কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের আবাদ করছি। ফলনও আশানুরূপ পেয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছি প্রতি বছর। কিন্তু এই বীজে ফলন কয়েক গুন পাওয়া যাবে- রবজেলের এমন প্রতিশ্রুতিতে বীজ কিনে ৪ বিঘা জমিতে চাষ করে প্রতারিত হলাম। আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।

রহিদুল নামের একজন কৃষক বলেন, সুখসাগর পেঁয়াজ চাষে অন্যান্য বছর ভালো ফলন হওয়ায় আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছি। এ কারণে চলতি বছর আমি তিন বিঘা জমিতে রবজেলের পরামর্শে তারকাছ থেকে বীজ কিনে বোপণ করি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো ফলন দেখছিনা।

কোলা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মো: মোস্তফা, আঃ কুদ্দুস, ফরিদুল, হায়দার, মনিরুল, হাবিবুর, ছালাম, সাইদুল, ফারুক, আসাদুল, বজলু, মশিউর, সুজন, মইনদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, আমাদের মধ্যে অধিকাংশ পরের জমি লীজ নিয়ে, বিভিন্ন জায়গায় ধার দেনা করে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। এছাড়া সার-বিষ বাকী করে নিয়ে ক্ষেতে ব্যবহার করেছি।

একদিকে নকল বীজ অন্য দিকে ধার-দেনা, জমির লীজ খরচ, আমরা কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

এ বিষয়ে রবজেল জানান, বীজ তো আমি দিয়েছি। গাছ হয়েছে, গুটি তো হবে। গাছ তো বাচ্চা গাছ। কিছুদিন ওদের সাথে সময় নেওয়া হয়েছে। গুটি আসবে কোম্পানির লোকের সাথে আমার কথা হয়েছে। কোন কোম্পানির বীজ জানতে চাইলে তিনি বলেন তাহলে কোম্পানির কাছে জেনে পরে জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভীন বলেন, কোলা গ্রামে কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা পেঁয়াজের মাঠ পরিদর্শন করে দেখেছি এলাকার কৃষকদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এই বীজ গুলো আসল সুখসাগর বীজ নয়, এগুলো বুনো বীজ বললেই চলে। আমরা পেঁয়াজ গাছ তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়েছি।