
মেহেরপুরে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। গত দু’দিনের ব্যবধানে মেহেরপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে মেহেরপুরের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ছোট সাইজের নিম্নমানের পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সকালে শহরের বড়বাজারের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। দুই দিন আগে যা বিক্রি হচ্ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। অল্প সময়ের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৬০ টাকা ও দেশি ৬৫ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ ও ১০৫ টাকা কেজি দরে।
মেসার্স লতিফ বানিজ্যালয়ের আড়তদার মোঃ মিজান বলেন, কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ না থাকায় বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এলসি কমলে দামও কমবে। আবার যদি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করে, তাহলে দাম আরও কমে যাবে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ধারাই অব্যাহত থাকবে। বাইরের পেঁয়াজের দাম কমলে এখানেও প্রভাব পড়বে।
সামাদ বানিজ্যের আড়তদার আব্দুস সামাদ বলেন, বাজারে এলসি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। যদি এলসি না খোলে, তাহলে আগামী এক মাস বাজারে অস্থিরতা থাকবে। নতুন পেঁয়াজ উঠলেই এই সংকট কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ না আসায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমাদের মোকামেই প্রতি মণ পেঁয়াজ ৪ হাজার টাকা করে পড়ছে। তার সঙ্গে পরিবহন খরচ আছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা। তাই যতদিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি না দেবে, ততদিন দাম চড়াই থাকবে।
খড়ি কাটা এলাকার আশরাফপুরের আসলাম বলেন, ৫০০ টাকা হাজিরি করি, আর ১০০ টাকার পেঁয়াজ কিনি। না খেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
কৃষক ওয়ারেস বলেন, পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখি কেজি ১০০ টাকা। এখন মাছ কেনার সামর্থও আমার নেই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর পুরোটাই দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে ছিল। এখন মৌসুম শেষ পর্যায়ে হওয়ায় দাম বাড়ছে। নতুন ফলন বাজারে আসা পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা থাকবে। তবে আমদানির সুযোগ দিলে এ দাম কমে যাবে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০৫ টাকায়। দুই দিন আগেও দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতো ৮০ টাকায় এবং ভারতীয় ৯০ টাকায়। গত সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৭০ টাকা ও দেশি ৮০ টাকা কেজি।
খুচরা ব্যবসায়ী মোঃ জাব্বার বলেন, আমদানি কম থাকায় আমরা পর্যাপ্ত মাল পাচ্ছি না। আগে যেভাবে পেঁয়াজ আসতো, এখন তার অর্ধেকও আসে না। ভারতীয় পেঁয়াজ তো এখন একেবারেই নেই। নতুন পেঁয়াজ উঠলে ও আমদানি বাড়লে বাজারে স্থিতি ফিরবে।
ব্যবসায়ী আবদুর সুবান বলেন, পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে, তার ওপর এলসি কম। তাই বাজারে সরবরাহও কমে গেছে। নতুন পেঁয়াজ উঠলেই দাম স্বাভাবিক হবে।
মোঃ কুদ্দুস বলেন, এখন বাজারে এলসি বন্ধ, তাই দাম বেশি।আমরা অপেক্ষা করছি ভারত ও নতুন পেঁয়াজ উঠার জন্য। যদি ভারত দেয় তাহলে দাম কমবে, না দিলে নতুন পেঁয়াজ উঠা পর্যন্ত দাম আরও বাড়তে পারে।
তহ-বাজারের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফি বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হচ্ছে লোকাল পেঁয়াজের আমদানি একদম নেই। এগুলো মেহেরপুরের পেঁয়াজ নয় কুষ্টিয়া, পাবনা ও ফরিদপুর থেকে আমদানি করা। এখন মালের ঘাটতি আগের তুলনায় অনেক বেশি। মাল প্রায় শেষ হয়ে যাওয়াতেই ঘাটতি হয়েছে, আর হঠাৎ করে দামটাও একটু বেশি।
তিনি আরও বলেন, দাম স্বাভাবিক হওয়ার একটাই উপায় এলসি করা ও পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়া। যতদিন এলসি পেঁয়াজ বাইরে থেকে না আসবে, ততদিন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। দাম বাড়ার কারণে চাষিদের কাছে যে পেঁয়াজগুলো আছে সেগুলো যদি বাজারে আসে, তাহলে দাম কমতে পারে। আর যদি না আসে, তাহলে একেবারে এলসি নির্ভর হয়ে যাবে বাজার।