২১ বছর আগে নির্মিত মেহেরপুর জেলা শহরের কাথুলী সড়কে পৌরসভার ২১ বছর আগে নির্মিত ড্রেণে পৌরবাসীর অভিযোগে আবর্জনা তুলতে গিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কোন আবর্জনা পায়নি। ২১ বছর আগে নির্মিত পানি নিষ্কাশন ড্রেনটি এপর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি।
৭ ফিট গভিরতার ড্রেণটি ৫ফিট মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই আবাসিক পানি নিষ্কাশন ড্রেণ হয়ে বাসাবাড়িতে চলে যাচ্ছে ড্রেণের ময়লা পানি। পচা ও দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ জীবানু। পৌর প্রশাসককে অভিযোগ করলে রোববার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ভরাট উত্তোলন করতে গিয়ে কোন আবর্জনা না পেয়ে ফিরে আসে।
মেহেরপুর শহর ও আশপাশের এলাকায় অপরিকল্পিত ও নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দূর্ভোগের কবলে পৌরবাসী দির্ঘদিন ধরে। কোন কোন ড্রেণ প্রায় দুই যুগ পরিষ্কার করা হয়নি। ভরাট হয়ে গেছে সেসব ড্রেণ। আবাসিক পানি নিষ্কাশনের সংযোগ ওইসব ড্রেণে। ড্রেণগুলো ভরাট হবার কারণে বৃষ্টি হলেই ড্রেণের নোংরা পানি বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। রাস্তা-ঘাটও ড্রেণের নোংরা পনিতে সয়লাব হওয়াতে পথচারীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যানবাহন চলাচলেও সৃষ্টি হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে সমস্যাটি চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। অপরিকল্পিত ড্রেন ও যুগ যুগ ধরে ড্রেণ পরিষ্কার না করায় বৃষ্টির সময় ড্রেণের পানি আবাসিক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ওই ড্রেণের নোংরা পানি উঠে এসে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে, যা পথচারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, “বৃষ্টি হলেই ঘর থেকে বের হতে ভয় লাগে। রাস্তার ওপর পানি ড্রেনের নৌংরা পানির দুর্গন্ধ।” আরেকজন ব্যবসায়ী জানান, “ ড্রেণ ভরাট হয়ে যাবার কারণে ড্রেণের পানি উপচে দোকানের সামনে জমে থাকে, ক্রেতা আসতেই চায় না। ব্যবসা মার খাচ্ছে।”
কাথুলী সড়কের মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন। তাদের বাড়ির সামনের ২শ মিটার ড্রেণ ২১ বছর আগে নির্মিত হয়েছে। এপর্যন্ত একদিনের জন্যও পরিষ্কার করা হয়নি। ড্রেণটি এখন মশার প্রজনন কেন্দ্র হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই সমস্যার মূল কারণ। মেহেরপুর শহরের অনেক এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণের সময় কোনো ধরনের পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়নি। আবার পুরোনো ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনায় আটকে থাকে, ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেন উপচে পড়ে। তাছাড়া পানি নিষ্কাশন ড্রেণ নির্মাণের আগে ড্রেণের লেবেল নক্সা প্রণয়ন করা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেণগুলো নির্মিত হয়েছে। ফলে ড্রেণে পানি আটকে থাকে। পৌর প্রকৌশলী বলছেন- ড্রেণ সংস্কারের পরিকল্পনা আছে।
এদিকে, সাধারণ মানুষ বলছেন, এমন আশ্বাস তাঁরা আগেও বহুবার শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। “শুধু পরিকল্পনা করে তো হবে না, বাস্তবায়ন দরকার। না হলে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি নেই,” বললেন ক্যাশব পাড়ার বাসিন্দা সালমা আক্তার। একই পাড়ার ইসমাইল হোসেন জানান, তাদের পাড়ার ড্রেণটি নির্মাণের একবছরের মধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে ড্রেণটি কোন উপকারে আসেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর এলাকায় বিভিন্ন সড়কে কোন উপকারে না আসা পানি নিষ্কাশন ড্রেণ অন্তত ২০ কিলোমিটার।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুললেই কেবল এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। পাশাপাশি পৌরবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
মেহেরপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “পৌর এলাকায় বিভিন্ন সময় নির্মিত ৪৩ কিলোমিটার ড্রেণ আছে। আমরা ড্রেন সংস্কারের পরিকল্পনা করছি। তবে বাজেট সীমিত হওয়ায় সব এলাকায় একসঙ্গে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।” তিনি আরও জানান, জনগণের সচেতনতা এবং আবর্জনা ড্রেনে না ফেলার প্রবণতা বাড়ানো গেলে কিছুটা উপকার হতে পারে। পৌরসভার প্রশাসকের দায়ীত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম জানান- পৌর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের আচরণ ভালো না। তিনি কাথুলী সড়কের ড্রেনটি পরিষ্কার করার জন্য কনজার্ভেটিভ ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলামকে জোর নির্দেশ দেন। রোববার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসে ২২ ফিট পর পর একঝুড়ি করে আবর্জনা তুলে ফিরে যায়।